পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88や2 রবীন্দ্র-রচনাবলী পামুবাবুকে ডাক পড়িতেই বিনয় উঠিয়া পড়িল । বরদাসুন্দরী কহিলেন, "একটু বোসো, পাচুবাবু এখনই আসবেন, দেরি হবে না।” বিনয় কহিল, “না। আমাকে মাপ করবেন।” সে এই বেষ্টন হইতে দূরে সরিয়া গিয়া ফাকায় সকল কথা ভালো করিয়া চিন্ত৷ করিবার অবসর পাইলে বঁাচে । বিনয় উঠতেই পরেশবাৰু উঠিলেন এবং তাহার কাধের উপর একটা হাত রাখিয়া কহিলেন, “বিনয়, তাড়াতাড়ি কিছু কোরো না— শাস্ত হয়ে স্থির হয়ে সকল কথা চিন্তা করে দেখো । নিজের মন সম্পূর্ণ না বুঝে জীবনের এত বড়ো একটা ব্যাপারে প্রবৃত্ত হোয়ো না ।” বরদাসুন্দরী র্তাহার স্বামীর প্রতি মনে মনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া কছিলেন, “গোড়ায় কেউ ভেবে চিস্তে কাজ করে না, অনৰ্থ বাধিয়ে বসে, তার পরে যখন একেবারে দম আটকে আসে তখন বলেন, বসে বসে ভাবো । তোমরা স্থির হয়ে বসে ভাবতে পার, কিন্তু আমাদের যে প্রাণ বেরিয়ে গেল।” বিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুধীর রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল । রীতিমত আহারে বসিয়া খাইবার পূর্বেই চাথিবীর ইচ্ছা যেমন, সুধীরের সেইরূপ চঞ্চলত উপস্থিত হইয়াছে। তাহার ইচ্ছা এখনই বিনয়কে বন্ধুসমাজে ধরিয়া লইয়া গিয়া সুসংবাদ দিয়া আনন্দ-উৎসব আরম্ভ করিয়া দেয়, কিন্তু স্বধীরের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের অভিঘাতে বিনয়ের মন আরও দমিয়া যাইতে লাগিল । সুধীর যখন প্রস্তাব করিল “বিনয়বাবু, আম্বন-না আমরা দুজনে মিলেই পামুবাবুর কাছে যাই”, তখন সে কথায় কর্ণপাত না করিয়া জোর করিয়া তাহার হাত ছাড়াইয়া বিনয় চলিয়া গেল । কিছু দূরে যাইতেই দেখিল, অবিনাশ তাহার দলের দুই-একজন লোকের সঙ্গে হন হন করিয়া কোথায় চলিয়াছে। বিনয়কে দেখিয়াই অবিনাশ কছিল, “এই-বে বিনয়বাবু, বেশ হয়েছে। চলুন আমাদের সঙ্গে ।” বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাচ্ছ ?” অবিনাশ কহিল, “কাশিপুরের বাগান ঠিক করতে যাচ্ছি। সেইখানে গৌরমোহনবাবুর প্রায়শ্চিত্তের সভা বসবে ।” বিনয় কহিল, "না, আমার এখন যাবার জো নেই।” অবিনাশ কহিল, “সে কী কথা! আপনারা কি বুঝতে পারছেন এটা কত বড়ো একটা ব্যাপার হচ্ছে ? নইলে গৌরমোহনবাবু কি এমন একটা অনাবশ্বক প্রস্তাব করতেন ? এখনকার দিনে হিন্দুসমাজকে নিজের জোর প্রকাশ করতে হবে। এই