পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 88ፃ গৌরমোহনবাবুর প্রায়শ্চিত্তে দেশের লোকের মনে কি একটা কম আন্দোলন হবে ? আমরা দেশ বিদেশ থেকে বড়ো বড়ো ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সবাইকে নিমন্ত্রণ করে আনব । এতে সমস্ত হিন্দুসমাজের উপরে খুব একটা কাজ হবে । লোকে বুঝতে পারবে এখনো আমরা বেঁচে আছি । বুঝতে পারবে হিন্দুসমাজ মরবার নয়।” অবিনাশের আকর্ষণ এড়াইয়া বিনয় চলিয়া গেল । Qぐう হারানবাবুকে যখন বরদাসুন্দরী ডাকিয়া সকল কথা বলিলেন তখন তিনি কিছু ক্ষণ গম্ভীর হইয়া বলিয়া রছিলেন এবং কহিলেন, “এ সম্বন্ধে একবার ললিতার সঙ্গে আলোচনা করে দেখা কর্তব্য ।” ললিতা আসিলে হারানবাবু তাহার গাম্ভীর্যের মাত্রা শেষ সপ্তক পর্যস্ত চড়াইয়। কহিলেন, “দেখো ললিতা, তোমার জীবনে খুব একটা দায়িত্বের সময় এসে উপস্থিত হয়েছে । এক দিকে তোমার ধর্ম আর-এক দিকে তোমার প্রবৃত্তি, এর মধ্যে তোমাকে পথ নির্বাচন করে নিতে হবে ।” η এই বলিয়া একটু থামিয়া হারানবাবু ললিতার মুখের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করিলেন। হারানবাবু জানিতেন তাহার এই স্তায়াগ্নিদীপ্ত দৃষ্টির সম্মুখে ভীরুতা কম্পিত হয়, কপটতা ভস্মীভূত হইয়া যায়— তাহার এই তেজোময় আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ব্রাহ্মসমাজের একটি মূল্যবান সম্পত্তি। ললিতা কোনো কথা বলিল না, চুপ করিয়া রহিল। হারানবাবু কহিলেন, “তুমি বোধ হয় শুনেছ, তোমার অবস্থার প্রতি দৃষ্টি করে অথবা যে কারণেই হোক বিনয়বাবু অবশেষে আমাদের সমাজে দীক্ষা নিতে রাজি इटझर्श्न ।" ললিতা এ সংবাদ পূর্বে শুনে নাই, শুনিয়া তাহার মনে কী ভাব হইল তাহাও প্রকাশ করিল না ; তাহার দুই চক্ষু দীপ্ত হইয়া উঠিল—সে পাথরের মূর্তির মতো স্থির হইয়া বসিয়া রছিল । হারানবাবু কছিলেন, “নিশ্চয়ই পরেশবাবু বিনয়ের এই বাধ্যতায় খুবই খুশি হয়েছেন । কিন্তু এতে যথার্থ খুশি হবার কোনো বিষয় আছে কি না সে কথা তোমাকেই স্থির করতে হবে । সেইজন্য আজ আমি তোমাকে ব্রাহ্মসমাজের নামে অনুরোধ করছি নিজের উন্মত্ত প্রবৃত্তিকে একপাশে সরিয়ে রাখো এবং কেবলমাত্র