পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88b* রবীন্দ্র-রচনাবলী ধর্মের দিকে দৃষ্টিরক্ষণ করে নিজের হৃদয়কে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, এতে খুশি হবার কি যথার্থ কারণ আছে ?” ললিতা এখনো চুপ করিয়া রহিল। হারানবাৰু মনে করিলেন, খুব কাজ হইতেছে। দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত বলিলেন, “দীক্ষা ! দীক্ষা যে জীবনের কী পবিত্র মুহূর্ত সে কি আজ আমাকে বলতে হবে! সেই দীক্ষাকে কলুষিত করবে ! মুখ সুবিধা বা আসক্তির আকর্ষণে আমরা ব্রাহ্মসমাজে অসত্যকে পথ ছেড়ে দেব— কপটতাকে আদর করে আহবান করে আনব ! বলে ললিতা, তোমার জীবনের সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের এই দুৰ্গতির ইতিহাস কি চিরদিনের জন্তে জড়িত হয়ে থাকবে ?” এখনো ললিতা কোনো কথা বলিল না, চৌকির হাতটা মুঠ দিয়া চাপিয়া ধরিয়া স্থির হইয়া বসিয়া রহিল । হারানবাবু কহিলেন, “আসক্তির ছিদ্র দিয়ে দুর্বলতা যে মানুষকে কিরকম দুৰ্নিবারভাবে আক্রমণ করে তা অনেক দেখেছি এবং মানুষের দুর্বলতাকে যে কিরকম করে ক্ষমা করতে হয় তাও আমি জানি, কিন্তু যে দুর্বলতা কেবল নিজের জীবনকে নয়, শতসহস্ৰ লোকের জীবনের আশ্রয়কে একেবারে ভিত্তিতে গিয়ে আঘাত করে, তুমিই বলো, ললিতা, তাকে কি এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমা করা যায় ? তাকে ক্ষমা করবার অধিকার কি ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন ?” ললিতা চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিল, “না না, পান্থবাবু, আপনি ক্ষমা করবেন না । আপনার আক্রমণই পৃথিবীমৃদ্ধ লোকের অভ্যাস হয়ে গেছে— আপনার ক্ষমা বোধ হয় সকলের পক্ষে একেবারে অসহ্য হবে ।” এই বলিয়া ঘর ছাড়িয়া ললিতা চলিয়া গেল । বরদাসুন্দরী হারানবাবুর কথায় উদবিগ্ন হইয়া উঠিলেন । তিনি কোনোমতেই এখন বিনয়কে ছাড়িয়া দিতে পারেন না। তিনি হারানবাবুর কাছে অনেক ব্যর্থ অহুনয় বিনয় করিয়া, অবশেষে ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে বিদায় দিলেন। তাছার মুশকিল হইল এই যে, পরেশবাবুকেও তিনি নিজের পক্ষে পাইলেন না, আবার হারানবাবুকেও না। এমন অভাবনীয় অবস্থা কেহ কখনো কল্পনাও করিতে পারিত না। হারানবাবুর সম্বন্ধে পুনরায় বরদাসুন্দরীর মত পরিবর্তন করিবার সময় আসিল । d যতক্ষণ দীক্ষাগ্রহণের ব্যাপারটা বিনয় ঝাপসা করিয়া দেখিতেছিল ততক্ষণ খুব জোরের সঙ্গেই সে আপনার সংকল্প প্রকাশ করিতেছিল । কিন্তু যখন দেখিল এজন্য ব্রাহ্মসমাজে তাহাকে আবেদন করিতে হইবে এবং হারানবাবুর সঙ্গে এ লইয়। পরামর্শ চলিবে তখন এই অনাবৃত প্রকাগুতার বিভীষিকা তাহাকে একাস্ত কুষ্ঠিত করিয়া তুলিল। কোথায় গিয়া কাহার সঙ্গে সে যে পরামর্শ করিবে কিছুই ভাবিয়া পাইল না,