পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se রবীন্দ্র-রচনাবলী পর নিজের বাড়িতে যখন তিনি বিনয়কে দেখিতে লাগিলেন তখন তাহার আচারের ছিদ্রগুলিই তাহাকে বেশি করিয়া বাজিতে লাগিল । বিনয়ের উপর তিনি অনেকটা নির্ভর স্থাপন করিয়াছিলেন বলিয়াই, তাহার প্রতি ধিক্কার তাহার প্রতিদিন বাড়িয়া উঠিতেছে। সেইজন্যই অত্যন্ত উংস্বকচিত্তে তিনি গোরার প্রতীক্ষা করিতেছিলেন । গোরার দিকে নেত্রপাত করিয়াই হরিমোহিনী একেবারে আশ্চর্য হইয়া গেলেন । এই তো ব্রাহ্মণ বটে ! যেন একেবারে হোমের আগুন । যেন শুভ্রকায় মহাদেব । র্তাহার মনে এমন একটি ভক্তির সঞ্চার হইল যে, গোরা যখন র্তাহাকে প্রণাম করিল তখন সে প্রণাম গ্রহণ করিতে হরিমোহিনী কুষ্ঠিত হইয়া উঠিলেন । হরিমোহিনী কহিলেন, “তোমার কথা অনেক শুনেছি বাবা ! তুমিই গৌর ? গৌরই বটে ! ওই-যে কীর্তনের গান শুনেছি— চাদের অমিয়া-সনে চন্দন বাটিয়া গো কে মাজিল গোরার দেহখানি— l আজ তাই চক্ষে দেখলুম। কোন প্রাণে তোমাকে জেলে দিয়েছিল আমি সেই কথাই ভাবি ।” গোর হাসিয়া কহিল, “আপনারা যদি ম্যাজিস্ট্রেট হতেন তা হলে জেলখানায় ইদুর বাদুড়ের বাসা হত ।” হরিমোহিনী কহিলেন, “ন| বাব, পৃথিবীতে চোর-জুয়াচোরের অভাব কী ? ম্যাজিস্ট্রেটের কি চোখ ছিল না ? তুমি যে যে-সে কেউ নও, তুমি যে ভগবানের লোক, সে তো মুখের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়। জেলখানা আছে বলেই কি জেলে দিতে হবে! বাপ রে ! এ কেমন বিচার !” গোর কহিল, "মানুষের মুখের দিকে তাকালে পাছে ভগবানের রূপ চোখে পড়ে তাই ম্যাজিস্ট্রেট কেবল আইনের বইয়ের দিকে তাকিয়ে কাজ করে। নইলে মানুষকে চাবুক জেল দ্বীপান্তর ফাসি দিয়ে কি তাদের চোখে ঘুম থাকত, না মুখে ভাত রুচত ?” করিমোহিনী কছিলেন, “যখনই ফুরগত পাই রাধারানীর কাছ থেকে তোমার বই পড়িয়ে শুনি । কবে তোমার নিজের মুখ থেকে ভালো ভালো সব কথা শুনতে পাব মনে এই প্রত্যাশা করে এতদিন ছিলুম। আমি মুখ মেয়েমানুষ, আর বড়ো দুঃখিনী, সব কথা বুঝিও নে, আবার সব কথায় মনও দিতে পারি নে। কিন্তু বাবা, তোমার কাছ থেকে কিছু জ্ঞান পাব এ আমার খুব বিশ্বাস হয়েছে।” গোরা বিনয়সহকারে এ কথার কোনো প্রতিবাদ না করিয়া চুপ করিা রহিল। হরিমোহিনী কহিলেন, “বাবা, তোমাকে কিছু খেয়ে যেতে হবে । তোমার মতো