পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ግe রবীন্দ্র-রচনাবলী পরেশবাবু ললিতার দিকে একবার চাহিয়া কহিলেন, “স্থা। ললিতা কি সেটা স্বীকার করতে পারবে ?” বিনয় ললিতার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল। বুঝিতে পারিল, ললিতার সমস্ত অন্ত:করণ সংকুচিত হইয়া উঠিয়াছে। ললিত হৃদয়ের আবেগে এমন একটি স্থানে আসিয়া পড়িয়াছে যাহা তাহার পক্ষে সম্পূর্ণ অপরিচিত ও সংকটময় । ইহাতে বিনয়ের মনে অত্যন্ত একটি করুণা উপস্থিত হইল । সমস্ত আঘাত নিজের উপর লইয়া ইহাকে বাচাইতে হইবে। এত বড়ো তেজ পরাভূত হইয়া ফিরিয়া যাইবে সেও যেমন অসহ, জয়ী হইবার দুর্দম উৎসাহে এ যে মৃত্যুবাণ বুক পাতিয়া লইবে সেও তেমনি নিদারুণ। ইহাকে জয়ীও করিতে হইবে, ইহাকে রক্ষাও করিতে হইবে । 曝° ললিতা মাথা নিচু করিয়া কিছুক্ষণ বসিয়া রছিল। তাহার পর এক বার মুখ তুলিয়া করুণচক্ষে বিনয়ের দিকে চাহিয়া কহিল, "আপনি কি সত্য-সত্য মনের সঙ্গে শালগ্রাম মানেন ?” বিনয় তৎক্ষণাৎ কহিল, "না, মানি নে ৷ শালগ্রাম আমার পক্ষে দেবতা নয়, আমার পক্ষে একটা সামাজিক চিহ্নমাত্র।” ললিত কহিল, "মনে মনে যাকে চিহ্ন বলে জানেন, বাইরে তাকে তো দেবতা বলে স্বীকার করতে হয় ?” বিনয় পরেশের দিকে চাহিয়া কহিল, "শালগ্রাম আমি রাখব না।” পরেশ চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিলেন, “বিনয়, তোমরা সব কথা পরিষ্কার করে চিস্তা করে দেখছ না । তোমার একলার বা আর-কারও মতামত নিয়ে কথা হচ্ছে না । বিবাহ তো কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটা একটা সামাজিক কার্য, সে কথা ভূললে চলবে কেন ? তোমরা কিছুদিন সময় নিয়ে ভেবে দেখে, এখনই মত স্থির করে ফেলো না ।” এই বলিয়া পরেশ ঘর ছাড়িয়া বাগানে বাহির হইয়া গেলেন এবং সেখানে একলা পায়চারি করিতে লাগিলেন । ললিতাও ঘর হইতে বাহির হইবার উপক্রম করিয়া একটু থামিল এবং বিনয়ের দিকে পশ্চাৎ করিয়া কহিল, “আমাদের ইচ্ছা যদি অন্যায় ইচ্ছা না হয় এবং সে ইচ্ছা যদি কোনো-একটা সমাজের বিধানের সঙ্গে আগাগোড়া না মিলে যায় তা হলেই আমাদের মাথা হেঁট করে ফিরে যেতে হবে এ আমি কোনোমতেই বুঝতে পারি নে। সমাজে মিথ্যা ব্যবহারের স্থান আছে আর স্থান নেই ন্যায়সংগত আচরণের ?” বিনয় ধীরে ধীরে ললিতার কাছে আসিয়া দাড়াইয়া কছিল, “আমি কোনো