পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8ፃ» সমাজকেই ভয় করি নে, আমরা দুজনে মিলে যদি সত্যকে আশ্রয় করি তা হলে আমাদের সমাজের তুল্য এতবড়ো সমাজ আর কোথায় পাওয়া যাবে ?” বরদাসুন্দরী ঝড়ের মতে তাহাদের দুইজনার সম্মুখে আসিয়া কছিলেন, “বিনয়, শুনলুম নাকি তুমি দীক্ষা নেবে না ?” বিনয় কহিল, “দীক্ষণ আমি উপযুক্ত গুরুর কাছ থেকে নেব, কোনো সমাজের কাছ থেকে নেব না।” বরদাসুন্দরী অত্যস্ত ক্রুদ্ধ হইয়া কছিলেন, “তোমাদের এ-সব যড়যন্ত্র, এ সব প্রবঞ্চনার মানে কী ? 'দীক্ষা নেব? ভান ক’রে এই দুদিন আমাকে আর ব্রাহ্মসমাজ-মুদ্ধ লোককে ভুলিয়ে কাগুটা কী করলে বলে দেখি ! ললিতার তুমি কী সর্বনাশ করতে বলেছ সে কথা একবার ভেবে দেখলে না !” 聯 ললিত কহিল, “বিনয়বাবুর দীক্ষায় তোমাদের ব্রাহ্মসমাজের সকলের তো সম্মতি নেই। কাগজে তো পড়ে দেখেছ । এমন দীক্ষা নেবার দরকার কী ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “দীক্ষা না নিলে বিবাহ হবে কী করে ?” ললিত কহিল, "কেন হবে না ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “হিন্দুমতে হবে নাকি ?” বিনয় কহিল, “তা হতে পারে। যেটুকু বাধা আছে সে আমি দূর করে দেব ।” বরদাসুন্দরীর মুখ দিয়া কিছুক্ষণ কথা বাহির হইল না। তাহার পরে রুদ্ধকণ্ঠে কহিলেন, “বিনয়, যাও, তুমি যাও ! এ বাড়িতে তুমি এলো না !” ہوا\ গোরা যে আজ আসিবে স্বচরিতা তাহ নিশ্চয় জানিত। ভোরবেলা হইতে তাহার বুকের ভিতরটা কঁপিয়া উঠিতেছিল। স্বচরিতার মনে গোরার আগমনপ্রত্যাশার আনন্দের সঙ্গে যেন একটা ভয় জড়িত ছিল । কেননা গোরা তাহাকে যে দিকে টানিতেছিল এবং আশৈশব তাহার জীবন আপনার শিকড় ও সমস্ত ডালপালা লইরা যে দিকে বাড়িয়া উঠিয়াছে দুয়ের মধ্যে পদে পদে সংগ্রাম তাহাকে অস্থির করিয়াছিল। তাই, কাল যখন মাসির ঘরে গোরা ঠাকুরকে প্রণাম করিল তখন স্বচরিতার মনে যেন ছুরি বিধিল । নাহয় গোরা প্রণামই করিল, নাহয় গোরার এইরূপই বিশ্বাস, এ কথা বলিয়া সে কোনোমতেই নিজের মনকে শাস্ত করিতে পারিল না। ఆరిe