পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳԵ- রবীন্দ্র-রচনাবলী যাচ্ছে সে পথে আমি ছাড়া কে তাকে আশীৰ্বাদ করবে আর ঈশ্বর ছাড়া কে তার সহায় আছেন ?” পরেশবাবু যখন চলিয়া গেলেন তখন স্বচরিতা স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিল। সে জানিত পরেশ ললিতাকে মনে মনে কত ভালোবাসেন, সেই ললিতা বাধা পথ ছাড়িয়া দিয়া এতবড়ো একটা অনির্দেশ্যের মধ্যে প্রবেশ করিতে চলিয়াছে ইহাতে র্তাহার মন যে কত উদবিগ্ন তাহা তাহার বুঝিতে বাকি ছিল না— তৎসত্ত্বে এই বয়সে তিনি এমন একটা বিপ্লবে সহায়তা করিতে চলিয়াছেন, অথচ ইহার মধ্যে বিক্ষোভ কতই অল্প ! নিজের জোর তিনি কোথাও কিছুমাত্র প্রকাশ করেন নাই, কিন্তু তাহার মধ্যে কতবড়ো একটা জোর অনায়াসেই আত্মগোপন করিয়া আছে ! পূর্বে হইলে পরেশের প্রকৃতির এই পরিচয় তাহার কাছে বিচিত্র বলিয়া ঠেকিত না, কেননা পরেশকে শিশুকাল হইতেই তো সে দেখিয়া আসিতেছে । কিন্তু আজই কিছুক্ষণ পূর্বেই নাকি স্বচরিতার সমস্ত অস্ত:করণ গোরার অভিঘাত সহ করিয়াছে, সেইজন্য এই দুই শ্রেণীর স্বভাবের সম্পূর্ণ পার্থক্য সে মনে মনে স্বম্পষ্ট অনুভব না করিয়া থাকিতে পারিল না । গোরার কাছে তাহার নিজের ইচ্ছা কী প্রচণ্ড ! এবং সেই ইচ্ছাকে সবেগে প্রয়োগ করিয়া সে অন্তকে কেমন করিয়া অভিভূত করিয়া ফেলে ! গোরার সহিত যে-কেহ যে-কোনো সম্বন্ধ স্বীকার করিবে গোরার ইচ্ছার কাছে তাহাকে নত হইতে হইবে । স্বচরিতা আজ নত হইয়াছে এবং নত হইয়া আনন্দও পাইয়াছে, আপনাকে বিসর্জন করিয়া একটা বড়ো জিনিস পাইয়াছে বলিয়া অনুভব করিয়াছে, কিন্তু তবু আজ পরেশ যখন তাহার ঘরের দীপালোক হইতে ধীরপদে চিন্তানত মস্তকে বাহিরের অন্ধকারে চলিয়া গেলেন তখন যৌবনতেজোদীপ্ত গোরার সঙ্গে বিশেষভাবে তুলনা করিয়াই স্বচরিতা অন্তরের ভক্তি-পুষ্পাঞ্জলি বিশেষ করিয়া পরেশের চরণে সমর্পণ করিল এবং কোলের উপর দুই করতল জুড়িয়া অনেক ক্ষণ পর্যন্ত শাস্ত হইয়া চিত্রাপিতের মতো বসিয়া রহিল। やり〉 আজ সকাল হইতে গোরার ঘরে খুব একটা আন্দোলন উঠিয়াছে। প্রথমে মহিম র্তাহার হুক টানিতে টানিতে আসিয়া গোরাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তা হলে, এতদিন পরে বিনয় শিকলি কাটল বুঝি ?” গোরা কথাটা বুঝিতে পারিল না, মহিমের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। মহিম