পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8b-S বসিল । সে কছিল, ”আগে যখন শুনতুম কেউ ব্রান্ধ হতে যাচ্ছে মনের মধ্যে খুব একটা রাগ হত, সে যেন বিশেষরূপ শাস্তি পায় এই আমার ইচ্ছা হত । কিন্তু এখন আমার তা হয় না। আমার মনে হয় মতকে মত দিয়ে, যুক্তিকে যুক্তি দিয়েই বাধা দেওয়া চলে, কিন্তু বুদ্ধির বিষয়কে ক্রোধ দিয়ে দণ্ড দেওয়া বর্বরতা ।” গোরা কহিল, “হিন্দু ব্রাহ্ম হচ্ছে দেখলে এখন আর রাগ হবে না, কিন্তু ব্রাহ্ম প্রায়শ্চিত্ত করে হিন্দু হতে যাচ্ছে দেখলে রাগে তোমার অঙ্গ জলতে থাকবে, পূর্বের সঙ্গে তোমার এই প্রভেদটা ঘটেছে।” বিনয় কছিল, “এটা তুমি আমার উপর রাগ করে বলছ, বিচার করে বলছ না।” গোরা কহিল, “আমি তোমার পরে শ্রদ্ধা করেই বলছি, এইরকম হওয়াই উচিত ছিল— আমি হলেও এইরকম হত । বহুরূপী যেরকম রঙ বদলায় ধর্মমত গ্রহণ ও ত্যাগ যদি সেইরকম আমাদের চামড়ার উপরকার জিনিস হত তা হলে কোনো কথাই ছিল না, কিন্তু সেটা মর্মের জিনিস বলেই সেটাকে হালকা করতে পারি নি। যদি কোনোরকম বাধা না থাকে, যদি দণ্ডের মাশুল না দিতে হয়, তা হলে গুরুতর বিষয়ে একটা মত- গ্রহণ বা পরিবর্তনের সময় মাহুষ নিজের সমস্ত বুদ্ধিকে জাগাবে কেন ? সত্যকে যথার্থ সত্য বলেই গ্রহণ করছি কিনা মানুষকে তার পরীক্ষা দেওয়া চাই । দও স্বীকার করতেই হবে। মূল্যটা এড়িয়ে রত্নটুকু পাবে সত্যের কারবার এমন শৌখিন কারবার নয় ।” তর্কের মুখে আর কোনো বলগা রহিল না । কথার উপরে কথা বাণের উপরে বাণের মতো আসিয়া পড়িয়া পরস্পর সংঘাতে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ বর্ষণ করিতে লাগিল । অবশেষে অনেক ক্ষণ বাগ যুদ্ধের পর বিনয় উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, “গোরা, তোমার এবং আমার প্রকৃতির মধ্যে একটা মূলগত প্রভেদ আছে। সেটা এতদিন কোনোমতে চাপা ছিল— যখনই মাথা তুলতে চেয়েছে আমিই তাকে নত করেছি, কেননা আমি জানতুম যেখানে তুমি কোনো পার্থক্য দেখ সেখানে তুমি সন্ধি করতে জান না, একেবারে তলোয়ার হাতে ছুটতে থাক । তাই তোমার বন্ধুত্বকে রক্ষা করতে গিয়ে আমি চিরদিনই নিজের প্রকৃতিকে খর্ব করে এসেছি। আজ বুঝতে পারছি এতে यत्रल झग्न नि ७ीय६ मछल झण्ड *ां८द्र नां ।” গোরা কছিল, “এখন তোমার অভিপ্রায় কী আমাকে খুলে বলে ।” বিনয় কছিল, ‘আজ আমি একলা দাড়ালুম। সমাজ বলে রাক্ষসের কাছে প্রতিদিন মানুষ-বলি দিয়ে কোনো মতে তাকে ঠাণ্ড করে রাখতে হবে এবং যেমন