পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8Ե-Գ গিয়েছিলুম। ছেলের সঙ্গে বাপের অনেক তফাত দেখা গেল। টাকার কথায় বাপ মোটেই কানে হাত দিলে না, বরঞ্চ এমনি আরম্ভ করলে যে আমারই কানে হাত ওঠবার জো হল । ছেলেটিও দেখলুম এ-সকল বিষয়ে অত্যন্ত পিতৃভক্ত, একেবারে পিতা হি পরমং তপ:— তাকে মধ্যস্থ রেখে কোনো ফল হবে না । এবারে কোম্পানির কাগজটা না ভাঙিয়ে কাজ সারা হল না। তা যাই হোক, তুমিও অবিনাশকে দুই-এক কথা বলে দিয়ে । তোমার মুখ থেকে উৎসাহ পেলে—” গোরা কহিল, “টাকার অঙ্ক তাতে কিছু কমবে না।” মহিম কহিলেন, “তা জানি, পিতৃভক্তিটা যখন কাজে লাগবার মতো হয় তখন সামলানো শক্ত ।” গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “কথাটা পাকা হয়ে গেছে ?” মহিম কহিলেন, “ই ।” গোরা । দিনক্ষণ একেবারে স্থির ? মহিম । স্থির বইকি, মাঘের পূর্ণিমাতিথিতে। সে আর বেশি দেরি নেই। বাপ বলেছেন, হীরে-মানিকে কাজ নেই, কিন্তু খুব ভারি সোনার গয়না চাই । এখন, কী করলে সোনার দর না বাড়িয়ে সোনার ভার বাড়াতে পারি স্তাকরার সঙ্গে কিছু দিন তারই পরামর্শ করতে হবে । গোরা কহিল, "কিন্তু এত বেশি তাড়াতাড়ি করবার কী দরকার আছে ? অবিনাশ ষে অল্পদিনের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজে ঢুকবে এমন আশঙ্কা নেই।” মহিম কহিলেন, “তা নেই বটে, কিন্তু বাবার শরীর ইদানীং বড়ো খারাপ হয়ে উঠেছে সেট তোমরা লক্ষ্য করে দেখছ না । ডাক্তারেরা যতই আপত্তি করছে ওঁর নিয়মের মাত্রা আরও ততই বাড়িয়ে তুলছেন। আজকাল যে সন্ন্যাসী ওঁর সঙ্গে জুটেছে সে ওঁকে তিন বেলা স্নান করায়, তার উপরে আবার এমনি হঠযোগ লাগিয়েছে যে চোখের তারা-ভূক্ষ নিশ্বাসপ্রশ্বাস নাড়িটাড়ি সমস্ত একেবারে উলটোপালট হবার জো হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকতে থাকতে শশীর বিয়েটা হয়ে গেলেই স্ববিধা হয়— ওর পেনশনের জমা টাকাটা ওঙ্কারানন্দস্বামীর হাতে পড়বার পূর্বেই কাজটা সারতে পারলে আমাকে বেশি ভাবতে হয় না । বাবার কাছে কথাটা কাল পেড়েওছিলুম, দেখলুম বড়ো সহজ ব্যাপার নয়। ভেবেছি ওই সন্ন্যাসী বেটাকে কিছুদিন খুব কষে গাজা খাইরে বশ করে নিয়ে, ওরই দ্বারা কাজ উদ্ধার করতে হবে। স্বারা গৃহস্থ, যাদের টাকার দরকার সব চেয়ে বেশি, বাবার টাকা তাদের ভোগে আসবে না এটা তুমি নিশ্চয় জেনো । আমার মুশকিল হয়েছে এই যে, অন্তের বাবা কষে ՓԻՑ ծ