পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bybr রবীন্দ্র-রচনাবলী টাক তলব করে আর নিজের বাবা টাকা দেবার কথা শুনলেই প্রণায়াম করতে বসে যায়। আমি এখন ওই এগারো বছরের মেয়েটাকে গলায় বেঁধে কি জলে ডুব দিয়ে মরব ?” ૭૨ হরিমোহিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “রাধারানী, কাল রাত্রে তুমি কিছু খেলে না কেন ?” স্বচরিতা বিস্মিত হইয়া কহিল, "কেন, খেয়েছি বইকি।” হরিমোহিনী তাহার ঢাকা খাবার দেখাইয়া কহিলেন, "কোথায় খেয়েছ ? ওই-ষে পড়ে রয়েছে।” তখন স্বচরিতা বুঝিল, কাল খাবার কথা তাহার মনেই ছিল না। হরিমোহিনী রুক্ষ স্বরে কহিলেন, "এ-সব তো ভালো কথা নয় । আমি তোমাদের পরেশবাবুকে যতদূর জানি, তিনি যে এতদূর সব বাড়াবাড়ি ভালোবাসেন তা তো আমার মনে হয় না— তাকে দেখলে মামুষের মন শাস্ত হয় । তোমার আজকালকার ভাবগতিক তিনি যদি সব জানতে পারেন তা হলে কী বলবেন বলো দেখি ।” হরিমোহিনীর কথার লক্ষ্যটা কী তাহা স্বচরিতার বুঝিতে বাকি রহিল না। প্রথমটা মুহূর্তকালের জন্ত তাহার মনের মধ্যে সংকোচ আসিয়াছিল । গোরার সহিত তাহার সম্বন্ধকে নিতান্ত সাধারণ স্বীপুরুষের সম্বন্ধের সহিত সমান করিয়া এমনতরো একটা অপবাদের কটাক্ষ যে তাহদের উপরে পড়িতে পারে এ কথা সে কখনো চিন্তাই করে নাই । সেইজন্য হরিমোহিনীর বক্রোক্তিতে লে কুষ্ঠিত হইয়া পড়িল । কিন্তু পরক্ষণেই হাতের কাজ ফেলিয়া সে খাড়া হইয়া বসিল এবং হরিমোহিনীর মুখের দিকে চোখ তুলিয়া চাহিল। গোরার কথা লইয়া সে মনের মধ্যে কাহারও কাছে কোনো লজ্জা রাখিবে না ইহা মুহূর্তের মধ্যে সে স্থির করিল, এবং কহিল, "মাসি, তুমি তো জান, কাল গৌরমোহনবাৰু এসেছিলেন। তার সঙ্গে আলাপের বিষয়টি আমার মনকে খুব অধিকার করে বসেছিল, সেই জন্তে আমি খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছিলুম। তুমি থাকলে কাল অনেক কথা শুনতে পেতে |* হরিমোহিনী যেমন কথা শুনিতে চান গোরার কথা ঠিক তেমনটি নহে। ভক্তির কথা শুনিতেই তাহার আকাঙ্ক্ষা ; গোরার মুখে ভক্তির কথা তেমন সরল ও সরল হইয়া বাজিয়া ওঠে না। গোরার সম্মুখে বরাবর যেন এক জন প্রতিপক্ষ আছে ; kr