8おbr রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বচরিতা কহিল, "লে কথা আমি বুঝি নে, আমি সমাজও জানি নে, আমি জানি আমি হিন্দু।” হারানবাবু কহিলেন, “তুমি জান এতদিন তুমি অবিবাহিত রয়েছ কেবলমাত্র এতেই হিন্দুসমাজে তোমার জাত গিয়েছে ?” স্বচরিতা কহিল, “সে কথা নিয়ে আপনি বৃথা চিন্তা করবেন না, কিন্তু আমি আপনাকে বলছি আমি হিন্দু।” হারানবাবু কহিলেন, “পরেশবাবুর কাছে যে ধর্মশিক্ষা পেয়েছিলে তাও তোমার নতুন গুরুর পায়ের তলায় বিসর্জন দিলে!” স্বচরিতা কছিল, “আমার ধর্ম আমার অন্তর্যামী জানেন, সে কথা নিয়ে আমি কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করতে চাই নে। কিন্তু আপনি জানবেন আমি হিন্দু।” হারানবাবু তখন নিতান্ত অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “তুমি যতবড়ে হিন্দুই হও-না কেন— তাতে কোনো ফল পাবে না, এও আমি তোমাকে বলে যাচ্ছি । তোমার গৌরমোহনবাবুকে বিনয়বাবু পাও নি । তুমি নিজেকে হিন্দু হিন্দু বলে গলা ফাটিয়ে ম'লেও গৌরবাবু যে তোমাকে গ্রহণ করবেন এমন আশাও কোরে না । শিষ্যকে নিয়ে গুরুগিরি করা সহজ কিন্তু তাই বলে তোমাকে ঘরে নিয়ে ঘরকন্ন করবেন এ কথা স্বপ্নেও মনে কোরো না ।” স্বচরিত রান্নাবান্না সমস্ত ভুলিয়া বিদ্যুদবেগে ফিরিয়া দাড়াইয়া কহিল, “এ-সব আপনি কী বলছেন ।” হারানবাবু কহিলেন, “আমি বলছি, গৌরমোহনবাবু কোনোদিন তোমাকে বিবাহ করবেন না ।” সুচরিতা দুই চক্ষু দীপ্ত করিয়া কহিল, “বিবাহ ? আমি কি আপনাকে বলি নি তিনি আমার গুরু ?” হারানবাবু কহিলেন, “তা তো বলেছ। কিন্তু যে কথাটা বল নি সেটাও তো আমরা বুঝতে পারি।” স্বচরিতা কহিল, “আপনি যান এপান থেকে । আমাকে অপমান করবেন না । আমি আজ এই আপনাকে বলে রাখছি— আজ থেকে আপনার সামনে আমি আর বার হব না ।” হারানবাবু কহিলেন, “বার হবে কী করে বলে। এখন ষে তুমি জেনেন ! হিন্দু রমণী ! অস্বীপগুরূপা পরেশবাবুর পাপের ভরা এইবার পূর্ণ হল । এই বুড়োবাসে তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে থাকুন, আমরা বিদায় হলুম।”
