পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& " " . 亨 রবীন্দ্র-রচনাবলী আপনাকে বাচাইয়া আসিয়াছে। সেই নিয়মে কুত্ৰাপি গোরা শৈথিল্য স্বীকার করিতে চায় না । গোরা বলে, ভারতবর্ষের আর সমস্তই লুটপাট হইয়া যাইতেছে, কিন্তু তাহার যে প্রাণপুরুষকে সে এই-সমস্ত কঠিন নিয়মসংযমের মধ্যে প্রচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে তাহার গায়ে কোনো অত্যাচারী রাজপুরুষের হস্তক্ষেপ করিবার সাধ্যই নাই। যতদিন আমরা পরজাতির অধীন হইয়া আছি ততদিন নিজেদের নিয়মকে দৃঢ় করিয়া মানিতে হইবে। এখন ভালোমন্দ-বিচারের সময় নয়। যে ব্যক্তি স্রোতের টানে পড়িয়া মৃত্যুর মুখে ভাসিয়া যাইতেছে সে যাহার দ্বারাই নিজেকে ধরিয়া রাখিতে পারে তাহাকেই আঁকড়াইয়া থাকে, সে জিনিসটা সুন্দর কি কুত্ৰ বিচার করে না । গোরা বরাবর এই কথা বলিয়া আসিয়াছে, আজিও ইহাই তাহার বলিবার কথা । হরিমোহিনী সেই গোরার যখন আচরণের নিন্দ করিলেন তখন গজরাজকে অস্কুশে বিদ্ধ করিল। গোরা যখন বাড়ি আসিয়া পৌছিল তখন দ্বারের সম্মুখে রাস্তার উপর বেঞ্চি পাতিয়া খোলা গায়ে মহিম তামাক খাইতেছিলেন । আজ র্তাহার আপিসের ছুটি । গোরাকে ভিতরে ঢুকিতে দেখিয়া তিনিও তাহার পশ্চাতে গিয়া তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, “গোরা, শুনে যাও, একটি কথা আছে।” গোরাকে নিজের ঘরে লইয়া গিয়া মহিম কহিলেন, “রাগ কোরো না, ভাই, আগে জিজ্ঞাসা করছি, তোমাকে ও বিনয়ের ছোয়াচ লেগেছে নাকি ? ও অঞ্চলে যে বড়ো ঘন ঘন যাওয়া-আসা চলছে !” গোরার মুখ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। সে কহিল, “ভয় নেই ।” মহিম কহিলেন, "যে-রকম গতিক দেখছি কিছু তো বলা যায় না। তুমি ভাবছ ওটা একটা খাদ্যদ্রব্য, দিব্যি গিলে ফেলে তার পরে আবার ঘরে ফিরে আসবে । কিন্তু বড়শিটি ভিতরে আছে সে তোমার বন্ধুর দশা দেখলেই বুঝতে পারবে। আরে, যাও কোথায় আসল কথাটাই এখনো হয় নি। ও দিকে ব্রাহ্ম মেয়ের সঙ্গে বিনয়ের বিয়ে তো একেবারে পাকা হয়ে গেছে শুনতে পাচ্ছি । তার পর কিন্তু ওর সঙ্গে আমাদের কোনোরকম ব্যবহার চলবে না সে আমি তোমাকে আগে থাকতেই বলে রাখছি।” গোরা কহিল, “সে তো চলবেই না ।” মহিম কহিলেন, “কিন্তু মা যদি গোলমাল করেন তা হলে স্ববিধা হবে না । আমরা গৃহস্থ মানুষ, অমনিতেই মেয়েছেলের বিয়ে দিতে জিব বেরিয়ে পড়ে, তার পরে যদি ঘরের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজ বলাও তা হলে আমাকে কিন্তু এখান থেকে বাস ওঠাতে হবে।”