পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী গোরা চলিয়া গেলে আনন্দময়ী অনেক ক্ষণ বসিয়া চিন্তা করিলেন। তাহার পর ধীরে ধীরে উঠিয়া তাহার স্বামীর মহলে চলিয়া গেলেন । আজ একাদশী স্বতরাং আজ কৃষ্ণদয়ালের স্বপাকের কোনো আয়োজন নাই । তিনি ঘেরগুসংহিতার একটি নূতন বাংলা অনুবাদ পাইয়াছিলেন ; সেইটি হাতে লইয়া একখানি মুগচর্মের উপর বসিয়া পাঠ করিতেছিলেন । আনন্দময়ীকে দেখিয়া তিনি ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । আনন্দময়ী তাহার সহিত ষথেষ্ট দূরত্ব রাখিয়া ঘরের চৌকাঠের উপর বসিয়া কহিলেন, “দেখো, বড়ো অন্যায় হচ্ছে ।” কৃষ্ণদয়াল সাংসারিক ন্যায়-অন্যায়ের বাহিরে আসিয়া পড়িয়াছিলেন ; এইজন্য উদাসীনভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, "কী অন্যায় ?” আনন্দময়ী কহিলেন, “গোরাকে কিন্তু আর-এক দিনও ভুলিয়ে রাখা উচিত হচ্ছে না, ক্রমেই বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ছে।” গোরা যেদিন প্রায়শ্চিত্তের কথা তুলিয়াছিল সেদিন কৃষ্ণদয়ালের মনে এ কথা উঠিয়াছিল ; তাহার পরে যোগসাধনার নানা প্রকার প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়িয়া সে কথা চিন্তা করিবার অবকাশ পান নাই । আনন্দময়ী কহিলেন, “শশিমুখীর বিয়ের কথা হচ্ছে ; বোধ হয় এই ফাল্গুন মাসেই হবে । এর আগে বাড়িতে যতবার সামাজিক ক্রিয়াকর্ম হয়েছে আমি কোনো-নাকোনো ছুতায় গোরাকে সঙ্গে করে অন্য জায়গায় গেছি। তেমন বড়ো কোনো কাজও তো এর মধ্যে হয় নি । কিন্তু এবার শশীর বিবাহে ওকে নিয়ে কী করবে বলো। অন্যায় রোজই বাড়ছে— আমি ভগবানের কাছে দুবেলা হাত জোড় করে মাপ চাচ্ছি, তিনি শাস্তি যা দিতে চান সব আমাকেই যেন দেন । কিন্তু আমার কেবল ভয় হচ্ছে, আর বুঝি ঠেকিয়ে রাখতে পারা যাবে না, গোরাকে নিয়ে বিপদ হবে । এইবার আমাকে অনুমতি দাও, আমার কপালে যা থাকে, ওকে আমি সব কথা খুলে বলি।” কৃষ্ণদয়ালের তপস্তা ভাঙিবার জন্য ইন্দ্রদেব এ কী বিশ্ন পাঠাইতেছেন! তপস্যাও সম্প্রতি খুব ঘোরতর হইয়া উঠিয়াছে ; নিশ্বাস লইয়া অসাধ্য সাধন হইতেছে, আহারের মাত্রাও ক্রমে এতটা কমিয়াছে যে পেটকে পিঠের সহিত এক করিবার পণ রক্ষা হইতে অরি বড়ো বিলম্ব নাই। এমন সময় এ কী উৎপাত ! কৃষ্ণদয়াল কছিলেন, “তুমি কি পাগল হয়েছ ! এ কথা আজ প্রকাশ হলে আমাকে যে বিষম জবাবদিহিতে পড়তে হবে। পেনশন তো বন্ধ হবেই, হয়তো পুলিলে