পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q>o রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি সুবিধা পাই সেই সময়ে গিয়া কন্যা দেখিয়া আসিব ।’ এতদিন কলিকাতায় কোনোপ্রকারে কাটিয়াছিল, কিন্তু শ্বশুরঘরে ফিরিবার আশা যেমনি একটু অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল অমনি হরিমোহিনীর মন আর ধৈর্ষ মানিতে চাহিল না । নির্বাসনের প্রত্যেক দিন তাহার পক্ষে অসহ বোধ হইতে লাগিল । তাহার ইচ্ছা করিতে লাগিল এখনই স্বচরিতাকে বলিয়া দিন স্থির করিয়া কাজ সারিয়া ফেলি। তবু তাড়াতাড়ি করিতে র্তাহার সাহস হইল না। স্বচরিতাকে যতই তিনি নিকটে করিয়া দেখিতেছেন ততই তিনি ইহা বুঝিতেছেন যে, তাহাকে তিনি বুঝিতে পারেন নাই । হরিমোহিনী অবসর প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন এবং পূর্বের চেয়ে স্বচরিতার প্রতি বেশি করিয়া সতর্কতা প্রয়োগ করিলেন । আগে পূজাহিকে তাহার যত সময় লাগিত এখন তাহা কমিয়া আসিবার উপক্রম হইল ; তিনি সুচরিতাকে আর চোখের আড়াল করিতে চান না । স্বচরিতা দেখিল গোরার আসা হঠাৎ বন্ধ হইয়া গেল। সে বুঝিল হরিমোহিনী র্তাহাকে কিছু বলিয়াছেন। সে কহিল, ‘আচ্ছা বেশ, তিনি নাই আসিলেন, কিন্তু তিনিই আমার গুরু, আমার গুরু ? সম্মুখে যে গুরু থাকেন তাহার চেয়ে অপ্রত্যক্ষ গুরুর জোর অনেক বেশি । কেননা, নিজের মন তখন গুরুর বিদ্যমানতার অভাব আপনার ভিতর হইতে পুরাইয়া লয় । গোরা সামনে থাকিলে স্নচরিতা যেখানে তর্ক করিত এখন সেখানে গোরার রচনা পড়িয়া তাহার বাক্যগুলিকে বিনা প্রতিবাদে গ্রহণ করে । না বুঝিতে পারিলে বলে তিনি থাকিলে নিশ্চয় বুঝাইয়া দিতেন । কিন্তু গোরার সেই তেজস্বী মূর্তি দেখিবার এবং তাহার সেই বজ্রগর্ভ মেঘগর্জনের মতে বাক্য শুনিবার ক্ষুধা কিছুতেই কি মিটিতে চায় ! এই তাহার নিবৃত্তিহীন আন্তরিক ঔৎসুক্য একেবারে নিরস্তর হইয়া তাহার শরীরকে যেন ক্ষয় করিতে লাগিল । থাকিয়া থাকিয়া স্বচরিতা অত্যস্ত ব্যথার সহিত মনে করে কত লোক অতি অনায়াসেই রাত্রিদিন গোরার দর্শন পাইতেছে, কিন্তু গোরার দর্শনের কোনো মূল্য তাহারা জানে না । ললিতা আসিয়া স্বচরিতার গলা জড়াইয়া ধরিয়া একদিন অপরাহ্লে কহিল, “ভাই স্বচিদিদি ” স্বচরিতা কহিল, "কী ভাই ললিত ”