পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (t\S ললিত কহিল, “সব ঠিক হয়ে গেছে।” স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “কবে দিন ঠিক হল ?” ললিতা কছিল, “সোমবার ” স্বচরিতা প্রশ্ন করিল, “কোথায় ?” ললিতা মাথা নাড়া দিয়া কহিল, “সে-সব আমি জানি নে, বাবা জানেন ।” স্বচরিতা বাহুর দ্বারা ললিতার কটি বেষ্টন করিয়া কহিল, "খুশি হয়েছিল ভাই ?” ললিত কহিল, “খুশি কেন হব না !” 瞳 স্বচরিত কহিল, “যা চেয়েছিলি সবই পেলি, এখন কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া করবার কিছুই রইল না, সেই জন্তে মনে ভয় হয় পাছে তোর উৎসাহ কমে যায় ।” ললিত হাসিয়া কহিল, "কেন, ঝগড়া করবার লোকের অভাব হবে কেন ? এখন আর বাইরে খুঁজতে হবে না ।” স্বচরিতা ললিতার কপোলে তর্জনীর আঘাত করিয়া কহিল, “এই বুঝি ! এখন থেকে বুঝি এই-সমস্ত মতলব অঁাটা হচ্ছে। আমি বিনয়কে বলে দেব, এখনো সময় আছে, বেচারা সাবধান হতে পারে।” ললিতা কহিল, “তোমার বেচারার অার সাবধান হবার সময় নেই গো । আর তার উদ্ধার নেই । কুষ্ঠিতে ফাড়া যা ছিল তা ফলে গেছে, এখন কপালে করাঘাত আর ক্ৰন্দন ৷” স্বচরিত গম্ভীর হইয়া কহিল, “আমি যে কত খুশি হয়েছি সে আর কী বলব ললিতা ! বিনয়ের মতো স্বামীর যেন তুই যোগ্য হতে পারিস এই আমি প্রার্থনা করি।” ললিত কহিল, “ইস্ ! তাই বইকি! আর, আমার যোগ্য বুঝি কাউকে হতে হবে না ! এ সম্বন্ধে একবার তার সঙ্গে কথা কয়েই দেখে-না । তার মতটা একবার শুনে রাখো— তা হলে তোমারও মনে অমুতাপ হবে যে, এতবড়ো আশ্চর্য লোকটার আদর আমরা এতদিন কিছুই বুঝি নি, কী অন্ধ হয়েই ছিলুম!” স্বচরিতা কহিল, “যা হোক, এতদিনে তো একটা জহরি জুটেছে। দাম যা দিতে চাচ্ছে তাতে আর দুঃখ করবার কিছু নেই, এখন আর আমাদের মতো আনাড়ির কাছ থেকে আদর যাচবার দরকারই হবে না।” ললিত কহিল, “হবে না বইকি ! খুব হবে।" বলিয়া খুব জোরে স্বচরিতার গাল টিপিয়া দিল, সে "উ" করিয়া উঠিল। “তোমার আদর আমার বরাবর চাই– সেটা ফাকি দিয়ে আর কাউকে দিতে গেলে চলবে না ।” 嘎