পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(१२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বচরিতা তাহার গলা জড়াইয়া কছিল, “কী ভাই বক্তিরার ” সতীশ কহিল, “সোমবারে ললিতাদিদির বিয়ে—এ ক-দিন আমি বিনয়বাবুর বাড়িতে গিয়ে থাকব । তিনি আমাকে ডেকেছেন।” স্বচরিতা কহিল, “মাসিকে বলেছিস ?” সতীশ কহিল, “মাসিকে বলেছিলুম, তিনি রাগ করে বললেন, আমি ও-সব কিছু জানি নে, তোমার দিদিকে বলো, তিনি যা ভালো বোঝেন তাই হবে । দিদি, তুমি বারণ কোরো না । সেখানে আমার পড়াশুনার কিছু ক্ষতি হবে না, আমি রোজ পড়ব, বিনয়বাবু আমার পড়া বলে দেবেন।” স্বচরিত কহিল, “কাজকর্মের বাড়িতে তুই গিয়ে সকলকে অস্থির করে দিবি ।” সতীশ ব্যগ্র হইয়া কহিল, “না দিদি, আমি কিছু অস্থির করব না।” স্বচরিত কহিল, “তোর খুদে কুকুরটাকে সেখানে নিয়ে যাবি নাকি ?” সতীশ কহিল, “হা, তাকে নিয়ে যেতে হবে, বিনয়বাবু বিশেষ করে বলে দিয়েছেন। তার নামে লাল চিঠির কাগজে ছাপানো একটা আলাদা নিমন্ত্রণ-চিঠি এসেছে— তাতে লিখেছে তাকে সপরিজনে গিয়ে জলযোগ করে আসতে হবে ।” স্বচরিতা কহিল, “পরিজনটি কে ?” সতীশ তাড়াতাড়ি কহিল, “কেন, বিনয়বাবু বলেছেন, আমি । তিনি আমাদের সেই আর্গিনটাও নিয়ে যেতে বলেছেন দিদি, সেটা আমাকে দিয়ো— আমি ভাঙব না।” স্বচরিতা কহিল, “ভাঙলেই যে আমি বাচি । এতক্ষণে তা হলে বোঝা গেল— র্তার বিয়েতে আর্গিন বাজাবার জন্তেই বুঝি তোর বন্ধু তোকে ডেকেছেন ? রোশনচৌকিওয়ালাকে বুঝি একেবারে ফাকি দেবার মংলব ?” সতীশ অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “না, ককখনো না। বিনয়বাবু বলেছেন, আমাকে তার মিতবর করবেন । মিতবরকে কী করতে হয় দিদি ?” স্বচরিতা কহিল, “সমস্ত দিন উপোস করে থাকতে হয় ।” সতীশ এ কথা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস করিল। তখন স্বচরিতা সতীশকে কোলের কাছে দৃঢ় করিয়া টানিয়া কহিল, “আচ্ছা, ভাই বক্তিয়ার, তুই বড়ো হলে কী হবি বল দেখি ” ইহার উত্তর সতীশের মনের মধ্যে প্রস্তুত ছিল । তাহার ক্লাসের শিক্ষকই তাহার কাছে অপ্রতিহত ক্ষমতা ও অসাধারণ পণ্ডিত্যের আদর্শস্থল ছিল— সে পূর্ব হইতেই মনে মনে স্থির করিয়া রাখিয়াছিল সে বড়ো হইলে মাস্টারমশায় হইবে । স্বচরিতা তাহাকে কছিল, "অনেক কাজ করবার আছে ভাই। আমাদের দুই