পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qミや রবীন্দ্র-রচনাবলী ওঁকে সামলে চলা চাই । লোকে তো প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে, এত বয়স হল ওঁর বিয়েথাওয়া হল না কেন । সে একরকম করে চাপাচুপি দিয়ে রাখা চলে, ভালো পাত্রও যে চেষ্টা করলে জোটে না তা নয়, কিন্তু উনি যদি আবার ওঁর সাবেক চাল ধরেন তা হলে আমি কত দিকে সামলাব বলে । তুমি তো হিন্দুঘরের মেয়ে, তুমি তো সব বোঝ, তুমিই বা এমন কথা বল কোন মুখে ? তোমার নিজের মেয়ে যদি থাকত তাকে কি এই বিয়েতে পাঠাতে পারতে ? তোমাকে তো ভাবতে হত মেয়ের বিয়ে দেবে কেমন করে ” আনন্দময়ী বিস্মিত হইয়া স্বচরিতার মুখের দিকে চাহিলেন ; তাহার মুখ রক্তবর্ণ হইয়া বা বা করিতে লাগিল । আনন্দময়ী কহিলেন, “আমি কোনো জোর করতে চাই নে। স্বচরিতা যদি আপত্তি করেন তবে আমি—” হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, “আমি তো তোমাদের ভাব কিছুই বুঝে উঠতে পারি নে। তোমারই তো ছেলে ওঁকে হিন্দুমতে লইয়েছেন, তুমি হঠাৎ আকাশ থেকে পড়লে চলবে কেন ?” পরেশবাবুর বাড়িতে সর্বদাই অপরাধভীরুর মতো যে হরিমোহিনী ছিলেন, যিনি কোনো মানুষকে ঈষৎমাত্র অমুকুল বোধ করিলেই একান্ত আগ্রহের সহিত অবলম্বন করিয়া ধরিতেন, সে হরিমোহিনী কোথায় ? নিজের অধিকার রক্ষা করিবার জন্য ইনি আজ বাঘিনীর মতে দাড়াইয়াছেন ; তাহার স্বচরিতাকে তাহার কাছ হইতে ভাঙাইয়া লইবার জন্য চারি দিকে নানা বিরুদ্ধ শক্তি কাজ করিতেছে এই সন্দেহে তিনি সর্বদাই কণ্টকিত হইয় আছেন। কে স্বপক্ষ কে বিপক্ষ তাহা বুঝিতেই পারিতেছেন না, এইজন্য র্তাহার মনে আজ আর স্বচ্ছন্দতা নাই। পূর্বে সমস্ত সংসারকে শূন্ত দেখিয়া যে দেবতাকে ব্যাকুলচিত্তে আশ্রয় করিয়াছিলেন সেই দেবপূজাতেও তাহার চিত্ত স্থির হইতেছে না। একদিন তিনি ঘোরতর সংসারী ছিলেন— নিদারুণ শোকে যখন র্তাহার বিষয়ে বৈরাগ্য জন্মিয়াছিল তখন তিনি মনেও করিতে পারেন নাই যে আবার কোনোদিন তাহার টাকাকড়ি ঘরবাড়ি আত্মীয়পরিজনের প্রতি কিছুমাত্র আসক্তি ফিরিয়া আসিবে ; কিন্তু আজ হৃদয়ক্ষতের একটু আরোগ্য হইতেই সংসার পুনরায় তাহার সম্মুখে আসিয়া তাহার মনকে টানাটানি করিতে আরম্ভ করিয়াছে, আবার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা তাহার অনেক দিনের ক্ষুধা লইয়া পূর্বের মতোই জাগিয়া উঠিতেছে, যাহা ত্যাগ করিয়া আলিয়াছিলেন সেই দিকে পুনর্বার ফিরিবার বেগ এমনি উগ্র হইয়া উঠিয়াছে যে সংসারে যখন ছিলেন তখনে তাহাকে এত চঞ্চল করিতে পারে নাই । অল্প কয় দিনেই হরিমোহিনীর