পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা අර්ථ ساری) গারে তসরের চায়না কোট, কোমরে একটা চাদর জড়ানো, হাতে একটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ— স্বয়ং কৈলাস আসিয়া হরিমোহিনীকে প্রণাম করিল। তাহার বয়স পয়ত্রিশের কাছাকাছি হইবে, বেঁটেখাটো আঁটপাট মজবুত গোছের চেহারা, কামানো গোফদাড়ি কিছুদিন ক্ষৌরকর্মের অভাবে কুশগ্রের ন্যায় অঙ্কুরিত হইয়া উঠিয়াছে। অনেক দিন পরে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়কে দেখিয়া আনন্দিত হইয়া হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, "একি ঠাকুরপো যে ! বোসো, বোলো ।” বলিয়া তাড়াতাড়ি একখানি মাদুর পাতিয়া দিলেন । জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাতপা ধোবে ?” কৈলাস কহিল, "না, দরকার নেই । তা, শরীর তো বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে ।” শরীর ভালো থাকাটাকে একটা অপবাদ জ্ঞান করিয়া হরিমোহিনী কহিলেন, “ভালো আর কই আছে ? বলিয়া নানাপ্রকার ব্যাধির তালিকা দিলেন, ও কহিলেন, "তা, পোড়া শরীর গেলেই যে বঁচি, মরণ তো হয় না।” জীবনের প্রতি এইরূপ উপেক্ষায় কৈলাস আপত্তি প্রকাশ করিল এবং যদিচ দাদ নাই তথাপি হরিমোহিনী থাকাতে তাহাদের যে একটা মস্ত ভরসা আছে তাহারই প্রমাণস্বরূপে কহিল, “এই দেখো-না কেন, তুমি আছ বলেই কলকাতায় আসা হল— তবু একটা দাড়াবার জায়গা পাওয়া গেল।” আত্মীয়স্বজনের ও গ্রামবাসীদের সমস্ত সংবাদ আস্কোপাস্ত বিবৃত করিয়া কৈলাস হঠাৎ চারি দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এ বাড়িটা বুঝি তারই ?” হরিমোহিনী কহিলেন, “ই ।” কৈলাস কহিল, “পাক বাড়ি দেখছি ।” হরিমোহিনী তাহার উৎসাহকে উদ্দীপিত করিয়া কহিলেন, “পাকা বইকি ! সমস্তই পাকা ।” ঘরের কড়িগুলা বেশ মজবুত শালের, এবং দরজা-জানলাগুলো আমকাঠের নয়, ইহাও সে লক্ষ্য করিয়া দেখিল । বাড়ির দেয়াল দেড়খানা ইটের গাথনি কি দুইখানা ইটের তাহাও তাহার দৃষ্টি এড়াইল না । উপরে নীচে সর্ব-সমেত কয়টি ঘর তাহাও সে প্রশ্ন করিয়া জানিয়া লইল । মোটের উপর জিনিসটা তাহার কাছে বেশ সন্তোষজনক বলিয়াই বোধ হইল। বাড়ি তৈরি করিতে কত খরচ পড়িয়াছে তাহা আন্দাজ করা তাহার পক্ষে শক্ত, কারণ, এ-সকল মালমশলার দর তাহার ঠিক জানা ছিল না—