পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6:88 রবীন্দ্র-রচনাবলী বাড়ি হয়ে আসি ।” আনন্দময়ী কোনো প্রশ্ন না করিয়া কহিলেন, "তা, এল মা !” স্বচরিত ললিতার কানে কানে কহিল, "আজ আবার দুপুর বেলা আমি আসব।” পালকির সামনে দাড়াইয়া সুচরিতা কহিল, “সতীশ ?” হরিমোহিনী কহিলেন, “সতীশ থাকু-না।” সতীশ বাড়ী গেলে বিম্বস্বরূপ হইয়া উঠিতে পারে এই মনে করিয়া সতীশের দূরে অবস্থানই তিনি’সুযোগ বলিয়া গণ্য করিলেন । দুই জনে পালকিতে চড়িলে পর হরিমোহিনী ভূমিকা ফাদিবার চেষ্টা করিলেন । কহিলেন, “ললিতার তো বিয়ে হয়ে গেল। তা বেশ হল, একটি মেয়ের জন্তে তো পরেশবাবু নিশ্চিন্ত হলেন।” এই বলিয়া, ঘরের মধ্যে অবিবাহিত মেয়ে যে কতবড়ো একটা দায়, অভিভাবকগণের পক্ষে যে কিরূপ দুঃসহ উৎকণ্ঠার কারণ তাহ প্রকাশ করিলেন । "কী বলব তোমাকে, আমার আর অন্ত ভাবনা নেই । ভগবানের নাম করতে করতে ওই চিন্তাই মনে এসে পড়ে । সত্য বলছি, ঠাকুর-সেবায় আমি আগেকার মতো তেমন মন দিতেই পারি নে। আমি বলি, গোপীবল্লভ, সব কেড়েকুড়ে নিয়ে এ আবার আমাকে কী নূতন ফাদে জড়ালে!” হরিমোহিনীর এ যে কেবলমাত্র সংসারিক উৎকণ্ঠ তাহা নহে, ইহাতে র্তাহার মুক্তিপথের বিঘ্ন হইতেছে। তবু এতোবড়ো গুরুতর সংকটের কথা শুনিয়াও স্বচরিতা চুপ করিয়া রহিল, তাহার ঠিক মনের ভাবটি কী হরিমোহিনী তাহা বুঝিতে পারিলেন না । মৌন সম্মতিলক্ষণ বলিয়া যে একটি বাধা কথা আছে সেইটেকেই তিনি নিজের অম্বুকুলে গ্রহণ করিলেন । র্তাহার মনে হইল স্বচরিতার মন যেন একটু নরম হইয়াছে। স্বচরিতার মতো মেয়ের পক্ষে হিন্দুসমাজে প্রবেশের স্তায় এতবড়ো দুরূহ ব্যাপারকে হরিমোহিনী নিতান্তই সহজ করিয়া আনিয়াছেন এরূপ তিনি আভাস দিলেন। এমন একটি স্থযোগ একেবারে আসন্ন হইয়াছে যে, বড়ো বড়ো কুলীনের ঘরে নিমন্ত্রণের এক পংক্তিতে আহারের উপলক্ষ্যে কেহ তাহাকে টু শব্দ করিতে সাহল করিবে না । ভূমিকা এই পর্যন্ত অগ্রসর হইতেই পালকি বাড়িতে জাসিয়া পৌঁছিল। উভয়ে স্বারের কাছে নামিয়া বাড়িতে প্রবেশ করিয়া উপরে যাইবার সময় স্বচরিতা দেখিতে পাইল, স্বারের পাশের ঘরে একটি অপরিচিত লোক বেহারাকে দিয়া প্রবল করতাড়ন