পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQミ রবীন্দ্র-রচনাবলী পরিবার বৈষ্ণব, কিন্তু তিনি শক্তিমন্ত্ৰ লইয়াছেন, গৃহদেবতার সঙ্গে তাহার প্রত্যক্ষ যোগ অনেক দিন হইতেই নাই । তিনি গোরাকে কহিলেন, "এস, এস, বাইরে এস।” গোরা বাহির হইয়া আসিল । কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “এ কী কাণ্ড ! এখানে তোমার কী কাজ !” গোরা কোনো উত্তর করিল না। কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, "পূজারি ব্রাহ্মণ আছে, সে তো প্রত্যহ পূজা করে— তাতেই বাড়ির সকলেরই পূজা হচ্ছে, তুমি কেন এর মধ্যে এসেছ !” গোরা কছিল, "তাতে কোনো দোষ নেই ।” কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “দোষ নেই ! বল কী ! বিলক্ষণ দোষ আছে । যার যাতে অধিকার নেই তার সে কাজে যাবার দরকার কী ! ওতে যে অপরাধ হচ্ছে । শুধু তোমার নয়, বাড়িমৃদ্ধ আমাদের সকলের ।” গোরা কহিল, “যদি অস্তরের ভক্তির দিক দিয়ে দেখেন তা হলে দেবতার সামনে বসবার অধিকার অতি অল্প লোকেরই আছে, কিন্তু আপনি কি বলেন আমাদের ওই রামহরি ঠাকুরের এখানে পূজা করবার যে অধিকার আছে আমার সে অধিকারও নেই ?” কৃষ্ণদয়াল গোরাকে কী যে জবাব দিবেন হঠাৎ ভাবিয়া পাইলেন না । একটু চুপ করিয়া থাকিয়া কহিলেন, “দেখো, পূজা করাই রামহরির জাত-ব্যাবসা । ব্যাবসাতে যে অপরাধ হয় দেবতা সেটা নেন না । ও জায়গায় ক্রটি ধরতে গেলে ব্যাবসা বন্ধই করতে হয়— তা হলে সমাজের কাজ চলে না । কিন্তু তোমার তো সে ওজর নেই । তোমার এ ঘরে ঢোকবার দরকার কী ?” গোরার মতো আচারনিষ্ঠ ব্রাহ্মণের পক্ষেও ঠাকুরঘরে প্রবেশ করিলে অপরাধ হয়, এ কথা কৃষ্ণদয়ালের মতো লোকের মুখে নিতাস্থ অসংগত শুনাইল না। স্বতরাং গোরা ইহা সহ করিয়া গেল, কিছুই বলিল না । তখন কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “আর-একটা কথা শুনছি গোরা । তুমি নাকি প্রায়শ্চিত্ত করবার জন্তে সব পণ্ডিতদের ডেকেছ ?” গোরা কহিল, “হা ।” কৃষ্ণদয়াল অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “আমি বেঁচে থাকতে এ কোনোমতেই হতে দেব না।” গোরার মন বিদ্রোহী হইয়া উঠিবার উপক্রম করিল ; সে কছিল, "কেন ?”