পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ¢¢ፃ মেয়ের পক্ষে অভাবনীয় সৌভাগ্য। গোরার বুকের মধ্যে শেলের মতো বিধিতে লাগিল। যে লোকটিকে গোরা স্বচরিতার বাড়ির দ্বারের কাছে দেখিয়াছিল তাহাকে স্মরণ করিয়া গোর বৃশ্চিকদংশনে পীড়িত হইল । স্বচরিতাকে সে লাভ করিবে এমন কথা কল্পনা করাও গোরার পক্ষে অসহ । তাহার মন বজ্রনাদে বলিয়া উঠিল, 'না, এ কখনোই হইতে পারে না ! আর-কাহারও সঙ্গে স্বচরিতার মিলন হওয়া অসম্ভব ; বুদ্ধি ও ভাবের গভীরতায় পরিপূর্ণ স্বচরিতার নিস্তন্ধ গভীর হৃদয়টি পৃথিবীতে গোর ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মানুষের সামনে এমন করিয়া প্রকাশিত হয় নাই এবং আর-কাহারও কাছে কোনোদিনই এমন করিয়া প্রকাশিত হইতে পারে না । সে কী আশ্চর্য ! সে কী অপরূপ ! রহস্তনিকেতনের আস্তরতম কক্ষে সে কোন অনির্বচনীয় সত্তাকে দেখা গেছে! মানুষকে এমন করিয়া কয়বার দেখা যায় এবং কয়জনকে দেখা যায় ! দৈবের যোগেই স্বচরিতাকে যে ব্যক্তি এমন প্রগাঢ় সত্যরূপে দেখিয়ছে, নিজের সমস্ত প্রকৃতি দিয়া তাহাকে অনুভব করিয়াছে, সেক্ট তো স্বচরিতাকে পাইয়াছে । আর-কেহ আর-কখনো তাহাকে পাইবে কেমন করিয়া ? হরিমোহিনী কহিলেন, “রাধারানী কি চিরদিন এমনি আইবুড়ে থেকেই যাবে! এও কি কখনো হয় ।” সেও তো বটে | কাল যে গোরা প্রায়শ্চিত্ত করিতে যাইতেছে । তাহার পরে সে যে সম্পূর্ণ শুচি হইয়া ব্রাহ্মণ হইবে । তবে স্বচরিতা কি চিরদিন অবিবাহিতই থাকিবে ? তাহার উপরে চিরজীবনব্যাপী এই ভার চাপাইবার অধিকার কাহার আছে ! স্ত্রীলোকের পক্ষে এতবড়ো ভার আর কী হইতে পারে । হরিমোহিনী কত কী বকিয়া যাইতে লাগিলেন। গোরার কানে তাহ:েপৌছিল না । গোরা ভাবিতে লাগিল, “বাবা যে এত করিয়া আমাকে প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করিতে নিযেধ করিতেছেন, তাহার সে নিষেধের কি কোনো মূল্য নাই ? আমি আমার ষে জীবন কল্পনা করিতেছি সে হয়তো আমার কল্পনামাত্র, সে আমার স্বাভাবিক নয় । সেই কৃত্রিম বোঝা বহন করিতে গিয়া আমি পঙ্গু হইয়া যাইব । সেই বোঝার নিরস্তর ভারে আমি জীবনের কোনো কাজ সহজে সম্পন্ন করিতে পারিব না । এই-ষে দেখিতেছি আকাঙ্ক্ষা হৃদয় জুড়িয়া রহিয়াছে। এ পাথর নড়াইয়া রাখিব কোনখানে ! বাবা কেমন করিয়া জানিয়াছেন অস্তরের মধ্যে আমি ব্রাহ্মণ নই, আমি তপস্বী নই, সেই জন্যই তিনি এমন জোর করিয়া আমাকে নিষেধ করিয়াছেন।” গোরা মনে করিল, ‘যাই তার কাছে । আজ এখনই এই সন্ধ্যাবেলাতেই আমি