পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQbr রবীন্দ্র-রচনাবলী র্তাহাকে জোর করিয়া জিজ্ঞাসা করিব তিনি আমার মধ্যে কী দেখিতে পাইয়াছেন। প্রায়শ্চিত্তের পথও আমার কাছে রুদ্ধ এমন কথা তিনি কেন বলিলেন ? যদি আমাকে বুঝাইয়া দিতে পারেন তবে সে দিক হইতে ছুটি পাইব— ছুটি ? হরিমোহিনীকে গোরা কহিল, "আপনি একটুখানি অপেক্ষা করুন, আমি এখনই আসছি।” তাড়াতাড়ি গোরা তাহার পিতার মহলের দিকে গেল। তাহার মনে হইল, কৃষ্ণদয়াল এখনই তাহাকে নিস্কৃতি দিতে পারেন এমন একটা কথা তাহার জানা আছে । সাধনাশ্রমের দ্বার বন্ধ । দুই এক বার ধাক্কা দিল, খুলিল না— কেহ সাড়াও দিল না। ভিতর হইতে ধূপধুনার গন্ধ আসিতেছে। কৃষ্ণদয়াল আজ সন্ন্যাসীকে লইয়া অত্যস্ত গৃঢ় এবং অত্যন্ত দুরূহ একটি যোগের প্রণালী সমস্ত দ্বার রুদ্ধ করিয়া অভ্যাস করিতেছেন— আজি সমস্ত রাত্রি সে দিকে কাহারও প্রবেশ করিবার অধিকার নাই । 이 있 গোরা কহিল— ‘না । প্রায়শ্চিত্ত কাল না । আজই আমার প্রায়শ্চিত্ত আরম্ভ হয়েছে। কালকের চেয়ে ঢের বড়ো আগুন আজ জ্বলেছে । আমার নবজীবনের আরম্ভে খুব একটা বড়ো আহুতি আমাকে দিতে হবে বলেই বিধাতা আমার মনে এতবড়ো একটা প্রবল বাসনাকে জাগিয়ে তুলেছেন । নইলে এমন অদ্ভূত ঘটনা ঘটল কেন ? আমি ছিলুম কোন ক্ষেত্রে ! এদের সঙ্গে আমার মেলবার কোনো লৌকিক সম্ভাবনা ছিল না। আর, এমন বিরুদ্ধভাবের মিলনও পৃথিবীতে সচরাচর ঘটে না । আবার সেই মিলনে আমার মতো উদাসীন লোকের চিত্তেও যে এতবড়ো দুর্জয় একটা বাসনা জাগতে পারে সে কথা কেউ কল্পনাও করতে পারত না । ঠিক আজই আমার এই বাসনার প্রয়োজন ছিল । আজ পর্যস্ত আমি দেশকে যা দিয়ে এসেছি তা অতি সহজেই দিয়েছি, এমন দান কিছু করতে হয় নি যাতে আমাকে কষ্টবোধ করতে হয়েছে। আমি ভেবেই পেতুম না, লোকে দেশের জন্যে কোনো জিনিস ত্যাগ করতে কিছুমাত্র কৃপণতা বোধ করে কেন । কিন্তু বড়ে যজ্ঞ এমন সহজ দান চায় না । দুঃখই চাই । নাড়ী ছেদন করে তবে আমার নবজীবন জন্মগ্রহণ করবে। কাল প্রাতে জনসমাজের কাছে আমার লৌকিক প্রায়শ্চিত হবে। ঠিক তার পুর্বরাত্রেই আমার জীবনবিধাতা এসে আমার দ্বারে আঘাত করেছেন। অন্তরের মধ্যে আমার অন্তরতম প্রায়শ্চিত্ত না হলে কাল আমি শুদ্ধি গ্রহণ করব কেমন করে ! যে দান আমার পক্ষে সকলের চেয়ে কঠিন দান সেই দান আমার দেবতাকে আজ সম্পূর্ণ