পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(సెరి রবীন্দ্র-রচনাবলী সে ছবিটিও মন্দ নহে । আয় ঘুম, আয় ঘুম বাগদিপাড়া দিয়ে । বাগদিদের ছেলে ঘুমোয় জাল মুড়ি দিয়ে । ওই শেষ ছত্রে জাল মুড়ি দিয়া বাগদিদের ছেলেট যেখানে-সেখানে পড়িয়া কিরূপ অকাতরে ঘুমাইতেছে সে ছবি পাঠকমাত্রেই উপলব্ধি করিতে পারিবেন। অধিক কিছু নহে, ওই জাল মুড়ি দেওয়ার কথা বিশেষ করিয়া বলাতেই বাগদি-সস্তানের ঘুম বিশেষরূপে প্রত্যক্ষ হইয়াছে । আয় রে অণয় ছেলের পাল মাছ ধরতে যাই । মাছের র্কাটা পায়ে ফুটল দোলায় চেপে যাই । দোলায় আছে ছ'পণ কড়ি, গুনতে গুনতে যাই । এ নদীর জলটুকু টলমল করে । এ নদীর ধারে রে ভাই বালি ঝুরুঝুরু করে । চাদমুখেতে রোদ লেগেছে, রক্ত ফুটে পড়ে । দোলায় করিয়া ছয় পণ কড়ি গুণিতে গুনিতে যাওয়াকে যদি পাঠকেরা ছবির হিসাবে অকিঞ্চিৎকর জ্ঞান করেন, তথাপি শেষ তিন ছত্রকে তাহার উপেক্ষা করিবেন না । নদীর জলটুকু টলমল করিতেছে এবং তীরের বালি ঝুরুঝুরু করিয়া খসিয়া খসিয়া পড়িতেছে, বালুতটবতী নদীর এমন সংক্ষিপ্ত সরল অথচ সুস্পষ্ট ছবি আর কী হইতে পারে । এই তো এক শ্রেণীর ছবি গেল । আর-এক শ্রেণীর ছবি আছে যাহা বর্ণনীয় বিষয় অবলম্বন করিয়া একটা সমগ্র ব্যাপার আমাদের মনের মধ্যে জাগ্রত করিয়া দেয় । হয়তো একটা তুচ্ছ বিষয়ের উল্লেখে সমস্ত বঙ্গগৃহ বঙ্গসমাজ জীবন্ত হইয়া উঠিয়া আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে । সে-সমস্ত তুচ্ছ কথা বড়ো বড়ো সাহিত্যে তেমন সহজে তেমন অবাধে তেমন অসংকোচে প্রবেশ করিতে পারে না । এবং প্রবেশ করিলেও আপনিই তাহার রূপাস্তর ও ভাবাস্তর হইয়া যায় । দাদা গো দাদা শহরে যাও । তিন টাকা করে মাইনে পাও ৷ দাদার গলায় তুলসীমালা । বউ বরনে চন্দ্রকলা ॥ ছেই দাদা তোমার পায়ে পড়ি । । বউ এনে দাও খেলা করি ॥