পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৯২ রবীন্দ্র-রচনাবলী এক-মুগু-ওয়ালা মানুষকে আমি কোনো প্রশ্ন না করিয়া বিশ্বাস করিয়া লইয়াছি, কারণ, সে আমার নিকটে প্রত্যক্ষ হইয়াছে ; দুই-মুগু-ওয়ালা মানুষের সম্বন্ধেও আমি কোনো বিরুদ্ধ প্রশ্ন করিতে চাহি না, কারণ, অমি তো তাহাকে মনের মধ্যে স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছি ; আবার স্কন্ধকাটা মানুষও আমার পক্ষে সমান সত্য, কারণ, সে তো আমার অনুভবের অগম্য নহে। একটি গল্প আছে, কোনো লোক সভাস্থলে উপস্থিত হইয়া কহিল, আজ পথে এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখিয়া আসিলাম ; বিবাদে একটি লোকের মুণ্ড কাটা পড়িল, তথাপি সে দশ পা চলিয়া গেল। সকলেই আশ্চর্য হইয়া কহিল, বল কী হে, দশ পা চলিয় গেল ? তাহাদের মধ্যে একটি স্ত্রীলোক ছিলেন ; তিনি বলিলেন, দশ পা চলা কিছুই আশ্চর্য নহে, উহার সেই প্রথম পা চলাটাই আশ্চর্য । স্বষ্টিরও সেইরূপ প্রথম পদক্ষেপটাই মহাশ্চর্য, কিছু ষে হইয়াছে ইহাই প্রথম বিস্ময় এবং পরম বিস্ময়ের বিষয়, তাহার পরে আরও যে কিছু হইতে পারে তাহাতে আশ্চর্য কী । বালক সেই প্রথম আশ্চর্যটার প্রতি প্রথম দৃষ্টিপাত করিতেছে— সে চক্ষু মেলিবামাত্র দেপিতেছে অনেক জিনিস আছে, আরও অনেক জিনিস থাকাও তাহার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নহে, এই জন্য ছড়ার দেশে সম্ভব-অসম্ভবের মধ্যে সীমানা-ঘটিত কোনো বিবাদ নাই— অীয় রে আয় টিয়ে নায়ে ভরা দিয়ে ॥ না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে । তা দেখে দেখে ভোদর নাচে ॥ ওরে ভোদর ফিরে চা । থোকার নাচন দেখে যা ৷ প্রথমত, টিয়ে পাখি নৌকা চড়িয়া আসিতেছে এমন দৃশ্য কোনো বালক তাহার পিতার বয়সেও দেখে নাই ; বালকের পিতার সম্বন্ধেও সে কথা থাটে । কিন্তু সেই অপূর্বতাই তাহার প্রধান কৌতুক । বিশেষত, হঠাৎ যখন অগাধ জলের মধ্য হইতে একটা স্ফীতকায় বোয়াল মাছ উঠিয়া, বলা নাই কহা নাই, খামক তাহার নৌকাখানা লইয়া চলিল এবং ক্রুদ্ধ ও ব্যতিব্যস্ত টিয়া মাথার রোওয়া ফুলাইয়া পাখা ঝাপটাইয়া অত্যুচ্চ চীংকারে আপত্তি প্রকাশ করিতে থাকিল তখন কৌতুক আরও বাড়ির উঠে। টিয়া বেচারার দুর্গতি এবং জলচর প্রাণীটার নিতাস্ত অভদ্র ব্যবহার দেখিয়া অকস্মাৎ ভোদরের দুৰ্নিবার নৃত্যস্থাও বড়ো চমৎকার। এবং সেই আনন্দনৰ্তনপর নিষ্ঠুর ভোদরটিকে নিজের নৃত্যবেগ সম্বরণপূর্বক খোকার নৃত্য দেখিবার জন্য ফিরিয়া