পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&S\9 রবীন্দ্র-রচনাবলী ইচ্ছা উত্তরোত্তর বাড়িয়া উঠিতেছে । বাস্তবিক এমন রঙ্গ আর কিছু নাই । যাহা হউক, আমাদের উপরে এই ছড়াটির রচনার ভার থাকিলে খুব সম্ভব ভূমিকাটা রীতিমত ফাদিয়া বসিতীম ; এমন আচমকা মাঝখানে আরম্ভ করিতাম না। প্রথমে একটা পরীক্ষণশালার বর্ণনা করিতাম, সেটা যদি বা ঠিক সেনেট-হলের মতো ন হইত, অনেকট ঈড়নগার্ডেনের অনুরূপ হইতে পারিত । এবং তাহার সহিত জ্যোৎস্নার আলো, দক্ষিণের বাতাস এবং কোকিলের কুহুধ্বনি যোগ করিয়া ব্যাপারটাকে বেশ একটুখানি জমজমাট করিয়া তুলিতাম— আয়োজন অনেক-রকম করিতে পারিতাম, কিন্তু এই সরল সুন্দর কন্যাটি যাহার মাথার কেশ ফিঙের অপেক্ষা কালো, হাতের শাখা রাজহংসের অপেক্ষা ধলো, সিথার সিদুর কুসুমফুলের অপেক্ষা রাঙা, স্নেহের কোল ছেলেদের কথার অপেক্ষ মিঃ এবং বক্ষঃস্থল শীতল জলের অপেক্ষা স্নিগ্ধ, সেই মেয়েটি— যে মেয়ে সামান্য কয়েকটি স্তুতিবাক্য শুনিয়া সহজ বিশ্বাসে ও সরল আনন্দে আত্মবিসর্জন করিতে প্রস্তুত হইয়াছে— তাহণকে আমাদের সেই বর্ণনাবহুল মার্জিত ছন্দের বন্ধনের মধ্যে এমন করিয়া চিরকালের মতো ধরিয়া রাখিতে পারিতাম न ! কেবল এই ছড়াটি কেন, আমাদের উপর ভার দিলে আমরা অধিকাংশ ছড়াই সম্পূর্ণ সংশোধন করিয়া নূতন সংস্করণের যোগ্য করিয়া তুলিতে পারি। এমন-কি, উহাদের মধ্যে সর্বজনবিদিত নীতি এবং সর্বজনদুর্বোধ তত্ত্বজ্ঞানেরও বাসা নির্মাণ করিতে পারি। কিছু না হউক, উহাদিগকে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থার উন্নততর শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করিয়া দিতে পারি। বিবেচনা করিয়া দেখুন, আমরা যদি কথনে আমাদের বর্তমান সভ্যসমাজে চাদকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আনিতে ইচ্ছা করি তবে কি তাহাকে নিম্নলিখিতরূপে তুচ্ছ প্রলোভন দেখাইতে পারি ? অণয় আয় চাদামামা টী দিয়ে যা । চাদের কপালে চাদ টী দিয়ে যা ৷ মাছ কুটলে মুড়ো দেব । ধান ভানলে কুঁড়ে দেব । কালো গোরুর দুধ দেব । দুধ খাবার বাটি দেব । চাদের কপালে চাদ টী দিয়ে যা ॥ এ কোন চাদ ? নিতান্তই বাঙালির ঘরের চাদ । এ আমাদের বাল্যসমাজের সর্বজ্যেষ্ঠ সাধারণ মাতুল চাদ । এ আমাদের গ্রামের কুটিরের নিকটে বায়ু