পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to br রবীন্দ্র-রচনাবলী অশ্ৰুরসে সজীব হইয়া উঠিতেছে । ও পারেতে কালে রঙ । বৃষ্টি পড়ে ঝম্ ঝম্ ॥ এ পারেতে লঙ্কা গাছটি রাঙা টুক্‌টুক্‌ করে । গুণবতী ভাই আমার মন কেমন করে । এ মাসটা থাক দিদি কেঁদে ককিয়ে । ও মাসেতে নিয়ে যাব পালকি সাজিয়ে ' হাড় হল ভাজ-ভাজা, মাস হল দড়ি । অীয় রে অায় নদীর জলে ঝাপ দিয়ে পড়ি । এই অন্তর্ব্যথা, এই রুদ্ধ সঞ্চিত অশ্রুজলোচ্ছাস কোন কালে কোন গোপন গৃহকোণ হইতে, কোন অজ্ঞাত অখ্যাত বিস্মৃত নববধূর কোমল হৃদয়খানি বিদীর্ণ করিয়া বাছির হইয়াছিল! এমন কত অসহ কষ্ট জগতে কোনো চিহ্ন না রাখিয়া অদৃশ্য দীর্ঘনিশ্বাসের মতে বায়ুস্রোতে বিলীন হইয়াছে । এটা কেমন করিয়া দৈবক্রমে একটি শ্লোকের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া গিয়াছে । ও পারেতে কালো রঙ, বৃষ্টি পড়ে ঝম্ ঝম্ । এমন দিনে এমন অবস্থায় মন-কেমন না করিয়া থাকিতে পারে না । চিরকালই এমনি হইয়া আসিতেছে। বহুপূর্বে উজ্জয়িনী-রাজসভার মহাকবিও বলিয়া গিয়াছেন— মেঘলোকে ভবতি মুখিনোইপ্যন্যথাকৃত্তিচেত: | . . . . . . . কিং পুনরুদূরসংস্থে । কালিদাস যে কথাটি ঈষৎ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন মাত্র, এই ছড়ায় সেই কথাটা বুক ফাটিয়া কাদিয়া উঠিয়াছে— ‘গুণবতী ভাই আমার মন কেমন করে।’ ‘হাড় হল ভাজ-ভাজা, মাস হল দড়ি । আয় রে অয়ি নদীর জলে বাপ দিয়ে পড়ি । ইহার ভিতরকার সমস্ত মর্মস্তিক কাহিনী, সমস্ত দুর্বিষহ বেদনাপরম্পরা কে বলিয়া দিবে ? দিনে দিনে রাত্রে রাত্রে মুহূর্তে মুহূর্তে কত সহ করিতে হইয়াছিল— এমন সময়, সেই স্নেহস্মৃতিহীন স্বথহীন পরের ঘরে হঠাৎ একদিন তাহার পিতৃগৃহের চিরপরিচিত ব্যথার ব্যর্থী ভাই আপন ভগিনীটির তত্ত্ব লইতে আসিয়াছে— হৃদয়ের স্তরে স্তরে সঞ্চিত নিগুঢ় অশ্রুরাশি সেদিন আর কি বাধা মানিতে পারে! সেই ঘর, সেই খেলা, সেই বাপ-মা, সেই স্বখশৈশব, সমস্ত মনে পড়িয়া আর কি এক দণ্ড দুরন্তু