পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য )ي هواO কাজটা যথাসাধ্য সহজে এবং সংক্ষেপে সাধন করিতে হইত। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বোধ হয় ঘরের বধূশাসনের জন্য পুলিসের আইনের চেয়ে সেই গার্হস্থ্য আইন, কনস্টেবলের হ্রস্বযষ্টির অপেক্ষ সহোদর ভ্রাতার হুড়কো-ঠেঙা ছিল ভালো । আজ আমরা স্ত্রীকে বাপের বাড়ি হইতে ফিরাইবার জন্য আদালত করিতে শিখিয়াছি, কাল হয়তো মান ভাঙাইবার জন্য প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দরখাস্ত দাখিল করিতে হইবে । কিন্তু হাল নিয়মেই হউক আর সাবেক নিয়মেই হউক, নিতান্ত পশিব বলের দ্বারা অসহায়া কন্যাকে অযোগ্যের সহিত যোজনা— এতবড়ো অস্বাভাবিক বর্বর নৃশংসতা জগতে আর অাছে কি না সন্দেহ । বাপ-মায়ের অপরাধ সমাজ বিশ্বত হইয়া আসে, কিন্তু বুড়া বরটা তাহার চক্ষুশূল । সমাজ সুতীব্র বিদ্রুপের দ্বারা তাহার উপরেই মনের সমস্ত আক্রোশ মিটাইতে থাকে । তালগাছ কাটম বোসের বাটম গৌরী এল ২ ঝি । তোর কপালে বুড়ো বর আমি করব কী ॥ টঙ্কা ভেঙে শস্থা দিলাম, কানে মদন কড়ি । বিয়ের বেলা দেখে এলুম বুড়ে চাপদাড়ি । চোখ খাও গো বাপ-মা, চোখ থাও গো খুড়ে । এমন বরকে বিয়ে দিয়েছিলে তামাক-খেগো বুড়ে । বুড়োর ইকো গেল ভেসে, বুড়ে মরে কেশে । নেড়েচেড়ে দেখি বুড়ে মরে রয়েছে। ফেন গালবার সময় বুড়ো নেচে উঠেছে। বৃদ্ধের এমন লাঞ্ছনা আর কী হইতে পারে! এক্ষণে বঙ্গগৃহের যিনি সম্রাট, যিনি বয়সে ক্ষুদ্রতম অথচ প্রতাপে প্রবলতম, সেই মহামহিম থোকা খুকু বা খুকুনের কথাটা বলা বাকি আছে । প্রাচীন ঋগ্‌বেদ ইন্দ্র চন্দ্র বরুণের স্তবগান উপলক্ষ্যে রচিত, আর মাতৃহৃদয়ের যুগলদেবতা থোকা এবং পুটুর স্তব হইতে ছড়ার উৎপত্তি। প্রাচীনতা হিসাবে কোনোটাই নূ্যন নহে। কারণ, ছড়ার পুরাতনত্ব ঐতিহাসিক পুরাতনত্ব নহে, তাহা সহজেই পুরাতন । তাহ। আপনার আদিম সরলতাগুণে মানবরচনার সর্বপ্রথম । সে এই উনবিংশ শতাব্দীর বাষ্পলেশশূন্ত তীব্র মধ্যাহ্নরেীত্রের মধ্যেও মানবহৃদয়ের নবীন অরুণোদয়রাগ রক্ষা করিয়া আছে । এই চিরপুরাতন নববেদের মধ্যে যে মেহগাথা, যে শিশুস্তবগুলি রহিয়াছে, তাহার বৈচিত্র্য সৌন্দর্য এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাসের আর সীমা নাই । মুম্বন্ধদয়া বন্দনাকারিণীগণ