পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&•%ყა রবীন্দ্র-রচনাবলী হাটের ঘুম ঘাটের ঘুম পথে পথে ফেরে। চার কড়া দিয়ে কিনলেম ঘুম মণির চোখে আয় রে । রাত্রি অধিক হইয়াছে, এখন তো আর হাটে ঘাটে লোক নাই । সেই জন্য সেই হাটের ঘুম, ঘাটের ঘুম, নিরাশ্রয় হইয়া অন্ধকারে পথে পথে মানুষ খুজিয়া খুজিয়া বেড়াইতেছে। বোধ করি সেইজন্যই তাহাকে এত স্থলভ মূল্যে পাওয়া গেল । নতুবা সমস্ত রাত্রির পক্ষে চার কড়া কড়ি এখনকার কালের মজুরির তুলনায় নিতান্তই যৎসামান্ত । শুনা যায় গ্রীক কবিগণ এবং মাইকেল মধুস্বদন দত্তও ঘুমকে স্বতন্ত্র মানবীরূপে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু নৃত্যকে একটা নির্দিষ্ট বস্তুরূপে গণ্য করা কেবল আমাদের ছড়ার মধ্যেই দেখা যায় । 羈 থেনা নাচন থেন । বট পাকুড়ের ফেনা ৷ বলদে থালো চিনা, ছাগলে খালো ধান । সোনার জাদুর জন্যে যায়ে নাচনা কিনে আন । কেবল তাহাই নহে । খোকার প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে এই নৃত্যকে স্বতন্ত্র সীমাবদ্ধ করিয়া দেখা সেও বিজ্ঞানের দূরবীক্ষণ বা অণুবীক্ষণের দ্বারা সাধ্য নহে, স্নেহবীক্ষণের দ্বারাই সম্ভব । হাতের নাচন, পায়ের নাচন, বাটা মুখের নাচন । নাটা চোপের নাচন, কাটালি ভুরুর নাচন । বাশির নাকের নাচন, মাজা-বেঙ্কুর নাচন । আর নাচন কী । অনেক সাধন ক’রে জাদু পেয়েছি । ভালোবাস কখনো অনেককে এক করিয়া দেখে কখনো এককে অনেক করিয়া দেখে, কখনো বৃহৎকে তুচ্ছ এবং কখনো তুচ্ছকে বৃহৎ করিয়া তুলে । নাচ রে নাচ রে, জাদু, নাচনখানি দেখি ’ নাচনখানি ! যেন জাদু হইতে তাহার নাচনখানিকে পৃথক করিয়া একটি স্বতন্ত্র পদার্থের মতো দেখা যায় ; যেন সেও একটি আদরের জিনিল । খোকা যাবে বেড় করতে তেলিমাগীদের পাড়া। এ স্থলে বেড় করতে না বলিয়া ‘বেড়াইতে বলিলেই প্রচলিত ভাষার গৌরব রক্ষা করা হইত কিন্তু তাহাতে খোকাবাবুর বেড়ানোর গৌরব হ্রাস হইত। পৃথিবীমৃদ্ধ লোক বেড়াইয়া থাকে, কিন্তু খোকাবাবু বেড় করেন। উহাতে খোকাবাবুর বেড়ানোটি একটু বিশেষ স্বতন্ত্র এবং স্নেহাস্পদ পদার্থরূপে প্রকাশ পায় ।