পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆరిన রবীন্দ্র-রচনাবলী কবি-সংগীত বাংলার প্রাচীন কাব্যসাহিত্য এবং আধুনিক কাব্যসাহিত্যের মাঝখানে কবিওয়ালাদের গান। ইহা এক নূতন সামগ্রী এবং অধিকাংশ নূতন পদার্থের ন্যায় ইহার পরমায়ু অতিশয় স্বল্প। একদিন হঠাৎ গোধূলির সময়ে যেমন পতঙ্গে আকাশ ছাইয়া যায়, মধ্যাহ্নের আলোকেও তাহাদিগকে দেখা যায় না এবং অন্ধকার ঘনীভূত হইবার পূর্বেই তাহারা অদৃপ্ত হইয়া যায়, এই কবির গানও সেইরূপ এক সময়ে বঙ্গসাহিত্যের স্বল্পক্ষণস্থায়ী গোধূলি-আকাশে অকস্মাং দেখা দিয়াছিল— তংপূর্বেও তাহাদের কোনো পরিচয় ছিল না, এখনও তাহাদের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না । গীতিকবিতা বাংলাদেশে বহুকাল হইতে চলিয়া আসিতেছে এবং গীতিকবিতাই বঙ্গসাহিত্যের প্রধান গৌরবস্থল। বৈষ্ণব কবিদের পদাবলী বসস্তকালের অপর্যাপ্ত পুষ্পমঞ্জরীর মতো ; যেমন তাহার ভাবের সৌরভ তেমনি তাহার গঠনের সৌন্দর্য । রাজসভাকবি রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল-গান রাজকণ্ঠের মণিমালার মতো, যেমন তাহার উজ্জলতা তেমনি তাহার কারুকার্য । আমাদের বর্তমান সমালোচ্য এই ‘কবির গান’গুলিও গান, কিন্তু ইহাদের মধ্যে সেই ভাবের গাঢ়তা এবং গঠনের পারিপাট্য নাই । না থাকিবার কিছু কারণও আছে। পূর্বকালের গানগুলি, হয় দেবতার সম্মুখে নয় রাজার সম্মুখে গীত হইত— স্বতরাং স্বতই কবির আদর্শ অত্যন্ত দুরূহ ছিল । সেইজন্য রচনার কোনো অংশেই অবহেলার লক্ষণ ছিল না, ভাব ভাষা ছন্দ রাগিণী সকলেরই মধ্যে সৌন্দর্য এবং নৈপুণ্য ছিল । তখন কবির রচনা করিবার এবং শ্রোতৃগণের শ্রবণ করিবার অব্যাহত অবসর ছিল ; তখন গুণীসভায় গুণাকর কবির গুণপনা-প্রকাশ সার্থক হইত । কিন্তু ইংরাজের নূতনস্তষ্ট রাজধানীতে পুরাতন রাজসভা ছিল না, পুরাতন আদশ ছিল না । তখন কবির আশ্রয়দাতা রাজা হুইল সর্বসাধারণ-নামক এক অপরিণত সুলায়তন ব্যক্তি, এবং সেই হঠাং-রাজার সভার উপযুক্ত গান হইল কবির দলের গান। তখন যথার্থ সাহিত্যরল-আলোচনার অবসর যোগ্যতা এবং ইচ্ছা কয়জনের ছিল ? তখন নুতন রাজধানীর নূতন-সমৃদ্ধিশালী কর্মশাস্ত বণিকসম্প্রদায় সন্ধ্যাবেলায় বৈঠকে বলিয়া দুই দণ্ড আমোদের উত্তেজনা চাহিত, তাহারা সাহিত্যরস চাহিত না। কবির দল তাহদের সেই অভাব পূর্ণ করিতে আসরে অবতীর্ণ হইল। তাহার পূর্ববর্তী গুণীদের গানে অনেক পরিমাণে জল এবং কিঞ্চিং পরিমাণে চটক মিশাইয়া,