পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

అ98 রবীন্দ্র-রচনাবলী জিনিসও চাহে না । গেল গেল কুল কুল, যাক কুল— তাহে নই আকুল । লয়েছি যাহার কুল লে আমারে প্রতিকূল । যদি কুলকুগুলিনী অমুকুলা হন আমায় অকুলের তরী কুল পাব পুনরায় । এখন ব্যাকুল হয়ে কি দুকূল হারাব সই । তাহে বিপক্ষ হাসিবে যত রিপুচয় । পাঠকেরা দেখিতেছেন, উপরি-উদ্ভূত গীতাংশে এক কুল শব্দের কূল পাওয়া দুষ্কর হইয়াছে। কিন্তু ইহাতে কোনো গুণপনা নাই ; কারণ, উহার অধিকাংশই একই শব্দের পুনরাবৃত্তিমাত্র। কিন্তু শ্রোতৃগণের কোনো বিচার নাই, তাহারা অত্যন্ত স্বলভ চাতুরীতে মুখ হইতে প্রস্তুত আছেন। এমনকি, যদি অনুপ্রাসছটার খাতিরে কবি ব্যাকরণ এবং শব্দশাস্ত্র সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেন তাহাতেও কাহারও আপত্তি নাই । দৃষ্টাস্ত— একে নবীন বয়স, তাতে স্বসভ্য, কাব্যরসে রসিকে । মাধুর্য গাম্ভীর্য, তাতে দাম্ভীর্ষ নাই, আর আর বউ যেমন ধারা ব্যাপিকে ॥ অধৈর্য হেরে তোরে স্বজনী, ধৈর্য ধরা নাহি যায় । যদি সিদ্ধ হয় সেই কার্য করব সাহায্য, বলি, তাই বলে বা আমায় ॥ একে বাংলা শব্দের কোনো ভার নাই, ইংরাজি প্রথামত তাহাতে অ্যাকসেন্ট, নাই, সংস্কৃত প্রথামত তাহাতে হ্রস্ব-দীর্ঘ রক্ষা হয় না, তাহাতে আবার সমালোচ্য কবির গানে স্বনিয়মিত ছন্দের বন্ধন না থাকাতে এই-সমস্ত অযত্নকৃত রচনাগুলিকে শ্রোতার মনে মুদ্রিত করিয়া দিবার জন্য ঘন ঘন অস্থপ্রাসের বিশেষ আবগুক হয় । সোজা দেয়ালের উপর লতা উঠাইতে গেলে যেমন মাঝে মাঝে পেরেক মারিয়া তাহার অবলম্বন স্বষ্টি করির বাইতে হয়, এই অনুপ্রাসগুলিও সেইরূপ ঘন ঘন শ্রোতাদের মনে পেরেক মারিয়া যাওয়া ; অনেক নিজীব রচনাও এই কৃত্রিম উপায়ে অতি দ্রুতবেগে মনোযোগ আচ্ছন্ন করিয়া বসে। বাংলা পাচালিতেও এই কারণেই এত অস্থপ্রাসের ঘট । উপস্থিতমত সাধারণের মনোরঞ্জন করিবার তার লইয়া কৰিলের গান-ছন্দ