পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ురీ\ు রবীন্দ্র-রচনাবলী -প্রকাশ-পূর্বক দোষারোপ করা ; সেই শখের কলহ শুনিতে শুনিতে ধিক্কার জন্মে । যাহাদের প্রকৃত আত্মসম্মানজ্ঞান দৃঢ় তাহারা সর্বদা অভিমান প্রকাশ করিতে অবজ্ঞা করিয়া থাকে । তাহাদের মানে আঘাত লাগিলে, হয় তাহারা স্পষ্টরূপে তাহার প্রতিকার করে নয় তাহা নি:শকে উপেক্ষা করিয়া যায় । প্রিয়জনের নিকট হইতে প্রেমে আঘাত লাগিলে, হয় তাহা গোপনে বহন করে নয় সাক্ষাংভাবে সম্পূর্ণরূপে তাহার মীমাংসা করিয়া লয়। আমাদের দেশে ইহা সর্বদাই দেখিতে পাওয়া যায়, পরাধীনতা যাহার অবলম্বন সেই অভিমানী, ষে এক দিকে ভিক্ষুক তাহার অপর দিকে অভিমানের অস্ত নাই, যে সর্ববিষয়ে অক্ষম সে কথায় কথায় অভিমান প্রকাশ করিয়া থাকে। এই অভিমান জিনিসটি বাঙালি প্রকৃতির মজ্জাগত নিলজ্জ দুর্বলতার পরিচায়ক । দুর্বলতা স্থলবিশেষে এবং পরিমাণবিশেষে স্বন্দর লাগে। স্বল্প উপলক্ষে অভিধান কখনো কখনো স্ত্রীলোকদিগকে শোভা পায় । যতক্ষণ নায়কের প্রেমের প্রতি নায়িকার যথার্থ দাবি থাকে ততক্ষণ মাঝে মাঝে ক্রীড়াচ্ছলে অথবা স্বল্প অপরাধের দ গুচ্ছলে ’ পুরুষের প্রেমাবেগকে কিয়ংকালের জন্য প্রতিহত করিলে সে অভিমানের একটা মাধুর্য দেখা যায় । কিন্তু গুরুতর অপরাধ অথবা বিশ্বাসঘাতের দ্বারা নায়ক যখন সেই প্রেমের মুলেই কুঠারাঘাত করে তখন যথারীতি অভিমান প্রকাশ করিতে বসিলে নিজের প্রতি একান্ত অবমাননা প্রকাশ করা হয় মাত্র, এইজন্ত তাহাতে কোনো সৌন্দয নাই এবং তাহা কাব্যে স্থান পাইবার যোগ্য নহে । দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে স্বামীকৃত সকল-প্রকার অসম্মাননা এবং অদ্যায় স্ত্রীকে অগত্য সহ এবং মার্জন করিতেই হয়— কিঞ্চিং অশ্ৰুজলসিক্ত বক্রবাক্যবাণ অথবা কিয়ংকাল অবগুণ্ঠনাবৃত বিমুখ মেীনাবস্থা ছাড়া আর কোনো অস্ত্র নাই । অতএব আমাদের সমাজে স্ত্রীলোকের সর্বদা অভিমান জিনিসটা সত্য সন্দেহ নাই । কিন্তু তাহ সর্বত্র সুন্দর নহে ইহা ও নিশ্চয় , কারণ, যাহাতে কাহারও অবিমিশ্র স্থায়ী হীনতা প্রকাশ করে তাহা কখনোই স্বন্দর হইতে পারে না । কবিদলের গানে রাধিকার যে অভিমান প্রকাশ হইয়াছে তাহা প্রায়শই এইরূপ অযোগ্য অভিমান । সাধ ক'রে করেছিলেম দুর্জয় মান, শু্যামের তায় হল অপমান । শ্যামকে সাধলেম না, ফিরে চাইলেম না, . কথা কইলেম না রেখে মান ॥