পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য )ه(عربی কৃষ্ণ সেই রাগের অম্বুরাগে, রাগে রাগে গো, পড়ে পাছে চন্দ্রাবলীর নবরাগে । ছিল পূর্বের যে পূর্বরাগ, আবার একি অপূর্ব রাগ, পাছে রাগে হ্যাম রাধার অাদর ভুলে যায় ॥ যার মানের মানে আমার মানে, সে না মানে তবে কী করবে এ মানে । মাধবের কত মান না হয় তার পরিমাণ, মানিনী হয়েছি যার মানে ॥ যে পক্ষে যখন বাড়ে অভিমান, সেই পক্ষে রাখতে হয় সম্মান । রাখতে শু্যামের মান, গেল গেল মান, অামার কিসের মান-অপমান ॥ এই কয়েক ছত্রের মধ্যে প্রেমের যেটুকু ইতিহাস যে ভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে তাহাতে কৃষ্ণের উপরেও শ্রদ্ধা হয় না, রাধিকার উপরেও শ্রদ্ধা হয় না, এবং চন্দ্রাবলীর উপরেও অবজ্ঞার উদয় হয় । কেবল নায়ক-নায়িকার অভিমান নহে, পিতা-মাতার প্রতি কন্যার অভিমানও কবিদলের গানে সর্বদাই দেখিতে পাওয়া যায় । গিরিরাজমহিষীর প্রতি উমার যে অভিমানকলহ তাহাতে পাঠকের বিরক্তি উদ্রেক করে না— তাহ সর্বত্রই সুমিষ্ট বোধ হয় । তাহার কারণ, মাতৃস্নেহে উমার যথার্থ অধিকার সন্দেহ নাই ; কন্যা ও মাতার মধ্যে এই-যে আঘাত ও প্রতিঘাত তাহাতে স্নেহসমুদ্র কেবল স্বন্দরভাবে তরঙ্গিত হইয়া উঠে । মাতা-কন্যা এবং নায়ক-নায়িকার মান-অভিমান ষে কবি-দলের গানের প্রধান বিষয় তাহার একটা কারণ, বাঙালির প্রকৃতিতে অভিমানটা কিছু বেশি ; অর্থাৎ অন্তের প্রেমের প্রতি স্বভাবতই তাহার দাবি অত্যস্ত অধিক ; এমন-কি, সে প্রেম অপ্রমাণ হইয়া গেলেও ইনিয়া-বিনিয়া কাদিয়া রাগিয়া আপনার দাবি সে কিছুতেই ছাড়ে না । আর-একটা কারণ, এই মান-অভিমানে উত্তর-প্রত্যুত্তরের তীব্রতা এবং জয়পরাজয়ের উত্তেজনা রক্ষিত হয় । কবিওয়ালাদের গানে সাহিত্যরসের স্থষ্টি অপেক্ষ ক্ষণিক উত্তেজনা-উদ্রেকই প্রধান লক্ষ্য । ধর্মভাবের উদ্দীপনাতেও নহে, রাজার সস্তোষের জন্যও নহে, কেবল সাধারণের অবসর-রঞ্জনের জন্ত গান-রচনা বর্তমান বাংলায় কবিওয়ালারাই প্রথম প্রবর্তন করেন ।