পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

®8ხz রবীন্দ্র-রচনাবলী সাহিত্য রচিত। তাহার মধ্যে হরগৌরীর কথা আমাদের ঘরের কথা । সেই হরগেীরীর কথায় আমাদের বাংলাদেশের একটা বড়ো মর্মের কথা আছে । . কন্যা আমাদের গৃহের এক মস্ত ভার। কন্যাদায়ের মতো দায় নাই । কস্তাপিতৃত্বং খলু নাম কষ্টমৃ। সমাজের অনুশাসনে নির্দিষ্ট বয়স এবং সংকীর্ণ মণ্ডলীর মধ্যে কন্যার বিবাহ দিতে আমরা বাধ্য । স্বতরাং সেই ক্লক্রিম তাড়না-বশতই বরের দর অত্যন্ত বাড়িয়া যায়, তাহার রূপ গুণ অর্থ সামর্থ্যে আর তত প্রয়োজন থাকে না । কন্যাকে অযোগ্য পাত্রে সমর্পণ করা, ইহা আমাদের সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক দুর্ঘটনা । ইহা লইয়া দুশ্চিস্তা, অমুতাপ, অশ্রুপাত, জামাতৃপরিবারের সহিত বিরোধ, পিতৃকুল ও পতিকুলের মধ্যবর্তিনী বালিকার নিষ্ঠুর মর্মবেদন, সর্বদাই ঘরে ঘরে উদ্ভূত হইয়া থাকে। একান্নপরিবারে আমরা দূর ও নিকট, এমন-কি নামমাত্র আত্মীয়কেও ধিয়া রাখিতে চাই— কেবল কন্যাকেই ফেলিয়া দিতে হয়। যে সমাজে স্বামী-স্ত্রীব্যতীত পুত্রকন্যা প্রভৃতি সকলেই বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়, তাহারা আমাদের এই দুঃসহ বেদনা কল্পনা করিতে পারিবে না । আমাদের মিলনধৰ্মী পরিবারে এই একমাত্র বিচ্ছেদ স্বতরাং ঘুরিয়া ফিরিয়া সর্বদাই সেই ক্ষতবেদনায় হাত পড়ে। হরগেীরার কথা বাংলার একাল্পপরিবারের সেই প্রধান বেদনার কথা । শরং-সপ্তমীর দিনে সমস্ত বঙ্গভূমির ভিখারি-বধু কন্যা মাতৃগৃহে আগমন করে, এবং বিজয়ার দিনে সেই ভিখারিঘরের অন্নপূর্ণ যখন স্বামীগৃহে ফিরিয়া যায় তখন সমস্ত বাংলাদেশের চোখে জল ভরিয়া আসে । এই-সকল কারণে হরগেীরীর সম্বন্ধীয় গ্রাম্যছড়াগুলি বাস্তব ভাবের । তাহ রচয়িতা ও শ্রোতৃবর্গের একান্ত নিজের কথা । সেই-সকল কাব্যে জামাতার নিন্দ, স্ত্রীপুরুষের কলহ ও গৃহস্থালীর বর্ণনা যাহা আছে তাহাতে রাজভাব বা দেবভাব কিছুই নাই ; তাহাতে বাংলাদেশের গ্রাম্য কুটিরের প্রাত্যহিক দৈন্ত ও ক্ষুদ্রতা সমস্তই প্রতিবিম্বিত । তাহাতে কৈলাস ও হিমালয় আমাদের পান-পুকুরের ঘাটের সম্মুখে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, এবং তাহাদের শিখররাজি আমাদের আম-বাগানের মাথা ছাড়াইয়া উঠিতে পারে নাই । যদি তাহারা নিজ নিজ অভ্ৰভেদী মূর্তি ধারণ করিবার চেষ্টামায় করিতেন তাহা হইলে বাংলার গ্রামের মধ্যে র্তাহীদের স্থান হইত না । শরৎকালে রানী বলে বিনয়বচন আর শুনেছ, গিরিরাজ, নিশার স্বপন ? এই স্বপ্ন হইতে কথা-আরম্ভ। সমস্ত আগমনী গানের এই ভূমিকা। প্রতিবৎসর শরৎকালে ভোরের বাতাস যখন শিশিরসিক্ত এবং রৌদ্রের রঙ কাচা সোনার মতো