পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য Ꮼ8> হইয়া আসে, তখন গিরিরানী সহসা একদিন তাহার শ্মশানবাসিনী সোনার গৌরীকে স্বপ্ন দেখেন, আর বলেন : আর শুনেছ গিরিরাজ নিশার স্বপন ? এ স্বল্প গিরিরাজ আমাদের পিতামহ এবং প্রপিতামহদের সময় হইতে ললিত বিভাস এবং রামকেলি রাগিণীতে শুনিয়া আলিতেছেন, কিন্তু প্রত্যেক বৎসরই তিনি নূতন করিয়া শোনেন । ইতিবৃত্তের কোন বংসরে জানি না, হরগৌরীর বিবাহের পরে প্রথম যে শরতে মেনকারানী স্বপ্ন দেখিয়া প্রত্যুষে জাগিয়া উঠিয়াছিলেন সেই প্রথম শরৎ সেই তাহার প্রথম স্বপ্ন লইয়াই বর্ষে বর্ষে ফিরিয়া ফিরিয়া আসে । জলে স্থলে আকাশে একটি বৃহৎ বেদন বাজিয়া উঠে, যাহাকে পরের হাতে দিয়াছি আমার সেই আপনার ধন কোথায় – বৎসর গত হয়েছে কত, করছে শিবের ঘর । যাও গিরিরাজ আনতে গৌরী কৈলাসশিখর । বলা বাহুল্য, গিরিরাজ নিতান্ত লঘু লোকটা নহেন। চলিতে ফিরিতে, এমনকি শোক-দুঃখ-চিন্তা অনুভব করিতে, তাহার স্বভাবতই কিঞ্চিং বিলম্ব ঘটিয়া থাকে । তাহার সেই সর্বাঙ্গীণ জড়তা ও ঔদাসীন্তের জন্য একবার গৃহিণীর নিকট গোটাকয়েক তীব্র তিরস্কার-বাক্য শুনিয়া তবে তিনি অঙ্কুশাহত হস্তীর ন্যায় গাত্ৰোখান করিলেন । শুনে কথা গিরিরাজা লজ্জায় কাতর পঞ্চমীতে যাত্রা করে শাস্ত্রের বিচার । তা শুনি মেনকারানী শীঘ্ৰগতি ধরি খাজা মণ্ডা মনোহর দিলেন ভাণ্ড ভরি ॥ মিশ্ৰিসাচ চিনির ফেনি ক্ষীর তক্তি সরে চিনির ফেনা এলাচদানা মুক্ত থরে থরে । ভাঙের লাড় সিদ্ধি বলে পঞ্চমুখে দিলেন। ভাণ্ড ভরি গিরিরাজ তখনি সে নিলেন । কিন্তু দৌত্যকার্যে ষেরূপ নিপুণতা থাকা আবশ্বক হিমালয়ের নিকট তাহ প্রত্যাশা করা যায় না। কৈলাসে কস্তার সহিত অনর্থক বচলা করিয়া তাহার বিপুল স্থল প্রকৃতির পরিচয় দিলেন। দোষের মধ্যে অভিমানিনী তাকে বলিয়াছিলেন— কহ বাবা নিশ্চয়, আর কব পাছে— সত্য করি বলে আমার মা কেমন আছে । তুমি নিষ্ঠুর হয়ে কুঠুর মনে পাসরিলা ঝি। শিবনিন্দী করছ কত তার বলব কী । সত্য দোষারোপে ভালোমত উত্তর জোগায় না বলিয়া রাগ বেশি হয়। গিরিরাজ