পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭(tર রবীন্দ্র-রচনাবলী ষষ্ঠী তিথিত উপনীত হলেন মর্তলোকে ॥ সারি সারি ঘটবারি অণর গঙ্গাজল । সাবধানে নিজমনে গাচ্ছেন মঙ্গল ॥ গিরিরানী কন বাণী চুমে দিয়ে মুখে কও তারিণী জামাই-ঘরে ছিলে কেমন সুখে ॥ এ ছড়াটি এইখানে শেষ হইল, ইহার বেশি আর বলিবার কথা নাই । এ দিকে বিদায়ের কাল সমাগত । কন্যাকে লইয়া শ্বশুরঘরের সহিত বাপের ঘরের একটু ঈর্ষার ভাব থাকে। বেশিদিন বধূকে বাপের বাড়িতে রাখা শ্বশুরপক্ষের মনঃপূত নহে । বহুকাল পরে মাতায় কন্যায় যথেষ্ট পরিতৃপ্তিপূর্বক মিলন হইতে না হইতেই শ্বশুরবাড়ি হইতে তাগিদ আসে, ধন্ন বসিয়া যায়। স্ত্রীবিচ্ছেদবিধুর স্বামীর অধৈর্য তাহার কারণ নহে। হাজার হউক, বধূ পরের ঘর হইতে আসে ; শ্বশুরঘরের সহিত তাহার সম্পূর্ণ জোড় লাগা বিশেষ চেষ্টার কাজ। সেখানকার নূতন কর্তব্য অভ্যাস ও পরিচয়বন্ধন হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়| তাহার বাল্যকালের স্বাভাবিক অণশ্রয়স্থলে ঘন ঘন যাতায়াত বা দীর্ঘকাল অবস্থিতি করিতে দিলে জোড় লাগিবার ব্যাঘাত করে । বিশেষত বাপের বাড়িতে বিবাহিত কন্যার কেবলই কর্তব্যহীন আদর, শ্বশুরবাড়িতে তাহার কর্তব্যের শাসন, এমন অবস্থায় দীর্ঘকাল বাপের বাড়ির আবহাওয়া শ্বশুরবর্গ বধুর পক্ষে প্রার্থনীয় জ্ঞান করেন না। এই সকল নানা কারণে পিতৃগৃহে কন্যার, গতিবিধিসম্বন্ধে শ্বশুরপক্ষীয়ের বিধান কিছু কঠোর হইয়াই থাকে । কন্যাপিতৃত্বের সেও একটা কষ্ট । বিজয়ার দিন বাংলাদেশের শ্বশুরবাড়ির সেই কড়া তাগিদ লইয়া শিব মেনকার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত । মাতৃস্নেহের স্বাভাবিক অধিকার সমাজশাসনের বিরুদ্ধে বৃথা আছাড় খাইয়া মরিতে লাগিল । নাহি কাজ গিরিরাজ, শিবকে বলো যেয়ে অমনি ভাবে ফিরে যাক সে, থাকবে আমার মেয়ে । তখন, শ্বশুরবাড়িতে দুর্গার যত কিছু দুঃখ আছে সমস্ত মাতার মনে পড়িতে লাগিল। শিবের ভাণ্ডারে যত অভাব, আচরণে যত ক্রাট, চরিত্রে যত দোষ, সমস্ত র্তাহার নিকট জাজল্যমান হইয়া উঠিল । অপাত্রে কস্তাদান করিয়াছেন, এখন সেট যতটা পারেন সংশোধন করিবার ইচ্ছা, যতটা সম্ভব গৌরীকে মাতৃক্ৰোড়ে ফিরাষ্টয়া লইবার চেষ্টা । শ্বশুরপৃহের আচারবিচার অনেক সময় দূর হইতে পিতৃগৃহের নিকট অযথা বলিয়া মনে হয় এবং পিতৃপক্ষীয়েরা স্নেহের আক্ষেপে কস্তার সমক্ষেই তাহার