পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী) می\ এটি ওটি ঠাক ঠিকাটি চাও হে গৌরী থাকলে দিতে পারি । তোমার পিতা আছে বটে অর্থের অধিকারী । সে কি দিতে পারে না দুমুটো শস্থের মুজুরি ॥ এই-যে ধনহীনতার ভড়ং এটা মহাদেবের নিতান্ত বাড়াবাড়ি, স্ত্রীজাতির নিকট ইহা স্বভাবতই অসহ। স্ত্রী যখন ব্রেসলেট প্রার্থনা করে কেরানিবাবু তখন আয়ব্যয়ের সুদীর্ঘ হিসাব বিশ্লেষণ করিয়া আপন দারিদ্র্য প্রমাণ করিতে বসিলে কোন ধর্মপত্নী তাহা অবিচলিত রসনায় সহ করিতে পারে । বিশেষত শিবের দরিদ্র্য ওটা নিতান্তই পোশাকি দারিদ্র্য, তাহা কেবল ইন্দ্র চন্দ্র বরুণ সকলের উপরে টেক্কা দিবার জন্য, কেবল লক্ষ্মীর জননী অন্নপূর্ণার সহিত একটা অপরূপ কৌতুক করিবার অভিপ্ৰায়ে। কালিদাস শংকরের অট্টহাস্তকে কৈলাসশিখরের ভীষণ তুহিনপুঞ্জের সহিত তুলনা করিয়াছেন । মহেশ্বরের শুভ্র দারিদ্র্যও তাহার এক নি:শব্দ অট্টহাস্ত । কিন্তু দেবতার পক্ষেও কৌতুকের একটা সীমা আছে । মহাদেবী এ সম্বন্ধে নিজের মনের ভাব ষেরূপে ব্যক্ত করিলেন তাহা অত্যন্ত স্পষ্ট । তা হাতে কোনো কথাই ইঙ্গিতের অপেক্ষায় রহিল न1 ।। গৌরী গৰ্জিয়ে কন ঠাকুর শিবাই আমি গৌরী তোমার হাতে শঙ্খ পরতে চাই ॥ আপনি যেমন যুব-যুবতী অমনি যুবক পতি হয় তবে সে বৈরস রস, নইলে কিছুই নয় ॥ আপনি বুড়ে। আধবয়সী ভাঙথুতুরায় মত্ত আপনার মতো পরকে বলে মন্দ ॥ এইখানে শেষ হয় নাই— ইহার পরে দেবী মনের ক্ষোভে আরও দুই-চারিটি যে কথা বলিয়াছেন তাহা মহাদেবের ব্যক্তিগত চরিত্র সম্বন্ধে, তাহা সাধারণ্যে প্রকাশযোগ্য নহে । সুতরাং আমরা উদ্ধত করিতে ক্ষাস্ত হইলাম । ব্যাপারটা কেবল এইখানেই শেষ হইল না ; স্ত্রীর রাগ যতদূর পর্যস্ত যাইতে পারে, অর্থাৎ বাপের বাড়ি পর্যস্ত, তাহা গেল । কোলে করি কীর্তিক হাটায়ে লম্বোদরে ক্ৰোধ করি হরের গৌরী গেলা বাপের ঘরে । এ দিকে শিব তাহার সংকল্পিত দাম্পত্য-প্রহসনের নেপথ্যবিধান শুরু করিলেন – বিশ্বকর্ম এনে করান শম্বের গঠন ।