পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাস্যকৌতুক g や〉 বশঙ্গদ । যে আজ্ঞে, আর বলব না । কিন্তু ওটা সর্বদাই মনে পড়ে । কুঞ্চবিহারী। বলেন কী বশম্বদবাবু, সর্বদাই মনে পড়ে ? এমন প্রশান্ত নিস্তব্ধ সুন্দর সন্ধ্যাবেলাতেও মনে পড়ছে ? বশম্বদ । আজ্ঞে, পড়ছে বৈকি ! এখন আরও বেশি মনে পড়ছে । সেই সাড়ে দশট বেলায় দুটি ভাত মুখে গুজে উমেদারি করতে বের হয়েছিলুম, তার পরে তো আর খাওয়া হয় নি । কুঞ্জবিহারী । তা নাই হল । খাওয়া নাই হল । বশম্বদবাবুর নীরবে মাপ-চুলকন এই শরতের জ্যোংস্নায় কি মনে হয় না যে, মানুষ যেন পশুর মতো কতকগুলো আহার না করেও বেঁচে থাকে ! যেন কেবল এই চাদের আলো, ফুলের মধু, বসস্থের বাতাস পেয়েই জীবন বেশ চলে যায় ! বশম্বদ । ( সভয়ে মুতুম্বরে ) আজ্ঞে, জীবন বেশ চলে যায় সত্যি, কিন্তু জীবন রক্ষে হয় না— আরও কিছু খাবার অবিশ্বক করে । কুঞ্জবিহারী । ( উষ্ণভাবে ) তবে তাই থাও গে যাও । কেবল মুঠো মুঠো কতকগুলো ভাত ডাল আর চচ্চড়ি গেলো গে যাও । এখানে তোমাদের অনধিকার প্রবেশ । বশদ্বদ । সেগুলো কোথায় পাওয়া যাবে মশায় ! আমি এখনই যাচ্ছি । ( কুঞ্জবাবুকে অত্যস্ত ক্রুদ্ধ হইতে দেখিয়া ) কুঞ্জবাবু, আপনি ঠিক বলেছেন, আপনার এই বাগানের হাওয়া খেলেষ্ট পেট ভরে যায় । আর কিছু খেতে ইচ্ছে করে না । কুঞ্জবিহারী । এ কথা আপনার মুখে শুনে খুশি হলুম, এই হচ্ছে যথার্থ মানুষের মতো কথা । চলুন, বাইরে চলুন ; এমন বাগান থাকতে ঘরে কেন ? বশম্বদ । চলুন ! (আপন মনে মুহুস্বরে ) হিমের সময়টা— গায়েও একখানা কাপড় নেই— কুঞ্চবিহারী । বা— শরৎকালের কী মাধুরী ! বশম্বদ । তা ঠিক কথা । কিন্তু কিছু ঠাণ্ড । কুঞ্জবিহারী । ( গায়ে শাল টানিয়া ) কিছুমাত্র ঠাণ্ডা নয় । বশম্বদ । না, ঠাণ্ডা নয় । ( হিহিহি কম্পন ) কুঞ্জবিহারী । ( আকাশে চাহিয়া ) বা বা বা— দেখে চক্ষু জুড়োয় । খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘগুলি নীল আকাশ-সরোবরে রাজহংসের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে, আর মাঝখানে চাঁদ যেন— বশম্বদ । ( গুরুতর কাশি ) থক্ থক্ থক্‌ !