পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাস্তকৌতুক &് চতুর্দিক অন্ধকার! বিষাদের মেঘে আচ্ছন্ন হাহুতাশ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না । এখানে আমরা বিষধর সপের গর্তে বাস করছি । এখেন থেকে বিদায় হওয়াই ভালো | নিশ্বাস বৈদ্যনাথ । দেখুন, ডাক্তার আমাকে সর্বদা আমোদ-আহ্লাদ নিয়ে প্রফুল্ল থাকতে বলেছে । আপনার ওই মুখ দেখেই আমার ব্যামো যেন হুহু করে বেড়ে উঠছে । আমাকে দেখে আপনার ভ্রাতৃশোক জন্মেছিল, কিন্তু আপনার ওই অন্ধকার দাড়ি ঝাড় দিলেই দেড় ডজন পুত্ৰশোক ঝরে পড়ে । আপনি একটা ভালো কথা তুলুন । এটা কোন স্টেশন মশায় ? দুঃখীরাম । এটা মধুপুর । এথেনে এ বংসর যেরকম ওলাউঠে হয়েছে সে আর বলবরি নয় । বৈদ্যনাথ । ( ব্যস্ত হইয় ) ওলাউঠে ! বলেন কী ! এখেনে গাড়ি কতক্ষণ থাকে ? দুঃখীরাম । অণধ ঘণ্টা । এথেনে পাঁচ মিনিট থাকা ও উচিত না । বৈদ্যনাথ । ( শুইয়া পড়িয়া ) কী সর্বনাশ ! সু:থীরাম । ভয় করা বড়ো পারাপ । ভয় ধরলে তাকে ওলাউঠে আগে ধরে । লরি সাহেবের বইয়ে লেখা আছে— বৈদ্যনাথ । আপনি আমাকে ছড়িলে আমার ভয়ও ছাড়ে । আপনি আমার হাড়ে হাড়ে কাপুনি ধরিয়েছেন । আপনি ডাক্তার ডাকুন— আমার কেমন করছে। দুঃর্থীরাম । ডাক্তার কোথায় ? বৈদ্যনাথ ৷ তবে স্টেশনমাস্টারকে ডাকুন। দুঃখীরাম । গাড়ি যে ছাড়ে-ছাড়ে । বৈদ্যনাথ । তবে গার্ড কে ডাকুন। দুঃখীরাম । গার্ড, আপনার কী করতে পারবে ? দীর্ঘনিশ্বাস বৈদ্যনাথ । তবে হরিকে ডাকুন। আমার হয়ে এল । মুছ। দুঃখীয়ামের উপর্যুপরি সুদীর্ঘ নিশ্বাসপতন ও গান— ‘মনে করে শেষের সে দিম ভয়ংকর" পৌষ ১২৯২