পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उ5ढ्ठ \©Só পঞ্চক । একটু উৎপাত হলে যে বাচি । চুপচাপ থেকে প্ৰাণ হাঁপিয়ে উঠছে। দাদাঠাকুর । তোমার যে শিক্ষা কাচা রয়েছে, মনে ভয় হচ্ছে না ? পঞ্চক । আমার ভয় সব চেয়ে কম-আমার একটি ভুলও হবে না । দাদাঠাকুর । হবে না ? পঞ্চক । একেবারে কিছুই জানি নে, ভুল করবার জায়গাই নেই। নিৰ্ভয়ে চুপ করে থাকব । দাদাঠাকুর । আচ্ছা বেশ, তোমার গুরু এলে তাকে দেখে নেওয়া যাবে। এখন তুমি আছ কেমন SS (FO পঞ্চক । ভয়ানক টানাটানির মধ্যে আছি। ঠাকুর । মনে মনে প্রার্থনা করছি গুরু এসে যে দিকে হােক এক দিকে আমাকে ঠিক করে রাখুন- হয় এখানকার খোলা হাওয়ার মধ্যে অভয় দিয়ে ছাড়া দিন, নয় তো খুব কষে পুঁথি চাপা দিয়ে রাখুন ; মাথা থেকে পা পর্যন্ত আগাগোড়া একেবারে সমান চ্যাপটা হয়ে যাই । দাদাঠাকুর । তা, তোমার গুরু তোমার উপর যত পুঁথির চাপই চাপান-না কেন, তার নীচের থেকে তোমাকে আস্ত টেনে বের করে আনতে পারব | পঞ্চক। তা তুমি পারবে সে আমি জানি । কিন্তু দেখো ঠাকুর, একটা কথা তোমাকে বলিঅচলায়তনের মধ্যে ঐ-যে আমরা দরজা বন্ধ করে আছি, দিব্যি আছি। ওখানে আমাদের সমস্ত বোঝাপড়া একেবারে শেষ হয়ে গেছে । ওখানকার মানুষ সেইজন্যে বড়ো নিশ্চিন্ত । কিছুতে কারও একটু সন্দেহ হবার জো নেই। যদি দৈবাৎ কারও মনে এমন প্রশ্ন ওঠে যে, আচ্ছা ঐ-যে চন্দ্রগ্রহণের দিনে শোবার ঘরের দেওয়ালে তিনবার সাদা ছাগলের দাড়ি বুলিয়ে দিয়ে আওড়াতে হয় “হুন হুন তিষ্ঠা তিষ্ঠ বন্ধ বন্ধ অমৃতের টু ফন্ট স্বাহা৷” এর কারণটা কী- তা হলে কেবলমাত্র চারটে সুপুরি আর এক মাষা সোনা হাতে করে যাও তখনই মহাপঞ্চকদাদার কাছে, এমনি উত্তরটি পাবে যে আর কথা সরাবে না । হয় সেটা মানো, নয় কানমলা খেয়ে বেরিয়ে যাও, মাঝে অন্য রাস্তা নেই । তাই সমস্তই চমৎকার সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু ঠাকুর, সেখান থেকে বের করে তুমি আমাকে এই যো-জায়গাটাতে এনেছ এখানে কোনো মহাপঞ্চকদাদার টিকি দেখবার জো নেই- বাধা জবাব পাই কার কাছে। সব কথারই বারো-আনা বাকি থেকে যায়। তুমি এমন করে মনটাকে উতলা করে দিলে—তার পর ? দাদাঠাকুর । তার পরে ? 5R যা হবার তা হবে । , যে আমাকে কঁদোয় সে কি আমনি ছেড়ে রবে । পথ হতে যে ভুলিয়ে আনে, পথ যে কোথায় সেই তা জানে, ঘর যে ছাড়ায় হাত সে বাড়ায় সেই তো ঘরে লবে । পঞ্চক । এতবড়ো ভরসা তুমি কেমন করে দিচ্ছি। ঠাকুর ! তুমি কোনো ভয় কোনো ভাবনাই রাখতে দেবে না, অথচ জন্মাবধি আমাদের ভয়ের অন্ত নেই। মৃত্যুভয়ের জন্যে অমিতায়ুৰ্ধারিণী মন্ত্রাপড়ছি, পাপের ভয়ের জন্যে মহামায়ুরী, বজ্ৰভায়ের জন্যে বজ্ৰগান্ধারী, ভূতের ভয়ের জন্যে চণ্ডভট্টারিকা, চোরের ভয়ের জন্যে হরাহরহাদয় । এমন আর কত নাম করব । মুক্ত। আমার বন্ধু এমন মন্ত্র আমাকে পড়য়েছেন যে তাতে চিরদিনের জন্য ভয়ের বিষদাঁত পঞ্চক । তোমাকে দেখে তা বোঝা যায়। কিন্তু সেই বন্ধুকে পেলে কোথা ঠাকুর । । দাদাঠাকুর । পাবই বলে সাহস করে বুক বাড়িয়ে দিলুম, তাই পেলুম। কোথাও যেতে হয় নি। পঞ্চক। সে কী রকম ?