পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WVV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী এসে পড়ে আর বঁাকে ঝাকে সবুজ রঙের পাখি তাদের বাসায় ফিরে আসতে থাকে- সেই আকাশের রঙে পাখির রঙে পাহাড়ের রঙে সে এক কাণ্ড হয়ে ওঠে। অমল । পাহাড়ে ঝরনা আছে ? ঠাকুরদা। বিলক্ষণ ! ঝরনা না থাকলে কি চলে ! একেবারে হীরে গালিয়ে ঢেলে দিচ্ছে। আর, তার কী নৃত্য ! নুড়িগুলোকে ঠুং-ঠাং ঠুং-ঠাং করে বাজাতে বাজাতে কেবলই কল কল ঝরঝর করতে করতে ঝরনাটি সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে বঁপ দিয়ে পড়ছে। কোনো কবিরাজের বাবার সাধ্য নেই তাকে একদণ্ড কোথাও আটকে রাখে। পাখিগুলো আমাকে নিতান্ত তুচ্ছ একটা মানুষ বলে যদি একঘরে করে না রাখত তা হলে ঐ ঝরনার ধারে তাদের হাজার হাজার বাসার একপাশে বাসা বেঁধে সমুদ্রের ঢেউ দেখে দেখে সমস্ত দিনটা কাটিয়ে দিতুম | অমল। আমি যদি পাখি হতুম তা হলে— ঠাকুরদা । তা হলে একটা ভারি মুশকিল হত । শুনলুম, তুমি নাকি দইওআলাকে বলে রেখেছি বড়ো হলে তুমি দই বিক্রি করবে- পাখিদের মধ্যে তোমার দইয়ের ব্যাবসাটা তেমন বেশ জমত না । বোধ হয় ওতে তোমার কিছু লোকসানই হত । মাধব দত্ত । আর তো আমার চলল না। আমাকে সুদ্ধ তোমরা খেপিয়ে দেবে দেখছি। আমি চললুম। অমল । পিসেমশায়, আমার দইওআলা এসে চলে গেছে ? মাধব দত্ত । গেছে বৈকি। তোমার ঐ শখের ফকিরের তলপি বয়ে ক্ৰৌঞ্চদ্বীপের পাখির বাসায় উড়ে বেড়ালে তার তো পেট চলে না । সে তোমার জন্য এক ভঁাড় দই রেখে গেছে। বলে গেছে, তাদের গ্রামে তার বোনঝির বিয়ে- তাই সে কলমিপাড়ায় বঁাশির ফরমাশ দিতে যাচ্ছে— তাই বড়ো ব্যস্ত আছে । অমল । সে যে বলেছিল, আমার সঙ্গে তার ছোটো বোনবিটির বিয়ে দেবে। ঠাকুরদা। তবে তো বড়ো মুশকিল দেখছি। অমল। বলেছিল, সে আমার টুকটুকে বউ হবে- তার নাকে নোলক, তার লাল ডুরে শাড়ি । সে সকালবেলা নিজের হাতে কালো গোরু দুইয়ে নতুন মাটির ভীড়ে আমাকে ফেনাসুদ্ধ দুধ খাওয়াবে, আর সন্ধের সময় গোয়ালঘরে। প্ৰদীপ দেখিয়ে এসে আমার কাছে বসে সাত ভাই চম্পার গল্প করবে । ঠাকুরদা। বা, বা, খাসা বউ তো ! আমি যে ফকির মানুষ আমারই লোভ হয় । তা বাবা ভয় নেই, এবারকার মতো বিয়ে দিক-না, আমি তোমাকে বলছি, তোমার দরকার হলে কোনোদিন ওর ঘরে বোনবিীর অভাব হবে না । মাধব দত্ত। যাও, যাও । আর তো পারা যায় না। অমল। ফকির, পিসেমশাই তো গিয়েছেন- এইবার আমাকে চুপিচুপি বলো-না ডাকঘরে কি ঠাকুরদা। শুনেছি তো তার চিঠি রওনা হয়ে বেরিয়েছে। সে-চিঠি এখন পথে আছে । অমল। পথে ? কোন পথে ! সেই যে বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে অনেক দূরে দেখা যায়, সেই ঘন বনের পথে ? : ঠাকুরদা। তবে তো তুমি সব জান দেখছি, সেই পথেই তো । অমল । আমি সব জানি ফকির ! ঠাকুরদা। তাই তো দেখতে পাচ্ছি- কেমন করে জানলে ? ? অমল। তা আমি জানি নে। আমি যেন চােখের সামনে দেখতে পাই- মনে হয় যেন আমি অনেকবার দেখেছি- সে অনেকদিন আগে- কতদিন তা মনে পড়ে না। বলব ? আমি দেখতে পাচ্ছি, রাজার ডাক-হরকরা পাহাড়ের উপর থেকে একলা কেবলই নেমে আসছে— বা হাতে তার