পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুই বোন 88 S লোক, বলেন মহৎ উদ্দেশ্যের খাতিরেই বিয়ে করবেন। তার পরে সেই উদ্দেশ্যটাকে দিনে দিনে তর্জমা করবেন শ্বশুরের চেকবইয়ের খাতায় । নীরদ জানত এইরকম কথাবার্তা অপরিহার্য । উর্মিকে বললে, “আমার বিয়ে করার একটা শর্ত আছে ; তোমার টাকা থেকে এক পয়সা নেব না, নিজের উপার্জন আমার একমাত্র অবলম্বন হবে ।” শ্বশুর ওকে যুরোপে পাঠাবার প্রস্তাব করেছিলেন, ও কিছুতেই রাজি হল না। সেজন্যে অনেক দিন অপেক্ষা করতেও হল। রাজারামবাবুকে জানিয়েছিল, ‘হাসপাতাল-প্রতিষ্ঠার উপলক্ষে যত টাকা দিতে চান সমস্তই দেবেন। আপনার মেয়ের নামে । আমি যখন সেই হাসপাতালের ভার নেব তার থেকে কোনো বৃত্তি নেব না। আমি ডাক্তার, জীবিকার জন্যে আমার ভাবনা নেই।” এই একান্ত নিম্পূহত দেখে ওর পরে রাজারামের ভক্তি দৃঢ় হল, আর উর্মি খুব গর্ব অনুভব করলে । এই গর্বের ন্যায্য কারণ ঘটাতেই শৰ্মিলার মন নীরদের 'পরে একেবারে বিরূপ হয়ে গেল । বললে, “ইস ! দেখব দেমাক কত দিন টেকে !” তার পর থেকে নীরদ যখন অভ্যাসমত অত্যন্ত গভীরভাবে কথা কইতি শৰ্মিলা আলাপের মাঝখানে হঠাৎ উঠে ঘাড় বাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যেত। কিছু দূর পর্যন্ত শোনা যেত তার পায়ের শব্দ। উর্মির খাতিরে কিছু বলত না, কিন্তু তার না-বলার ব্যঞ্জনা যথেষ্ট তেজোত্তপ্ত ছিল । প্রথম-প্ৰথম নীরদ প্ৰতি মেলে চিঠিপত্রে চার-পাচ পাতা ধরে বিস্তারিত উপদেশ দিয়ে এসেছে । কিছুদিন পরে চমক লাগিয়ে দিলে টেলিগ্রাম। বড়ো অঙ্কের টাকার জরুরি দাবি, অধ্যয়নের প্রয়োজনে। যে গর্ব এত দিন উর্মির প্রধান সম্বল ছিল তাতে যথেষ্ট ঘা লাগল বটে, কিন্তু মনে একটু সাস্তুনাও পেলে । যত দিন যায় এবং নীরদের অনুপস্থিতি দীর্ঘ হয়ে ওঠে ততই উর্মির পূর্বস্বভাবটা কর্তব্যের বেড়ার মধ্যে ফাক খুঁজে বেড়ায় । নিজেকে নানা ছলে ফাকিও দেয়, অনুতাপও করে । এইরকম আত্মগ্নানির সময় নীরদকে অর্থসাহায্য ওর পরিতপ্ত মনের সান্তুনাজনক । উর্মি টেলিগ্রামটা ম্যানেজারের হাতে ‘দিয়ে সসংকোচে বলে, “কাকাবাবু, টাকাটা-” ম্যানেজারবাবু বলেন, “ধাধা লাগছে। আমরা তো জানতুম টাকাটা ও পক্ষে অস্পৃশ্য ছিল।” ম্যানেজার নীরদকে পছন্দ করতেন না । উর্মি বলে, “কিন্তু বিদেশে—” কথাটা শেষ করে না। কাকাবাবু বলেন, “এ দেশের স্বভাব বিদেশের মাটিতে বদলে যেতে পারে সে জানি— কিন্তু আমরা তার সঙ্গে তাল রাখব কী করে ।” উর্মি বলে, “টাকাটা না পেলে হয়তো বিপদে পড়তে পারেন।” “আচ্ছা বেশ, পাঠাচ্ছি মা, তুমি বেশি ভেবো না । বলে রাখছি। এই শুরু হল, কিন্তু এই শেষ নয়।” শেষ যে নয়। অনতিকাল পরেই আরো বড়ো অঙ্কে তার প্রমাণ হল । এবার প্রয়োজন স্বাস্থ্যের । ম্যানেজার গভীরমুখে বললেন, “শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।” উমি শশব্যস্ত হয়ে বললে, “আর যাই কর, দিদিরা এ খবরটা যেন না পান ।” "একলা এই দায়িত্ব নিতে ভালো লাগছে না ।” "একদিন তো টাকা তার হাতেই পড়বে।” “পড়বার আগে দেখতে হবে যেন জলে না পড়ে ।” “কিন্তু ওঁর স্বাস্থ্যের কথা তো ভাবতে হবে।” "অস্বাস্থ্য নানা জাতের আছে, এটা ঠিক কোন জাতের বুঝে উঠতে পারছি নে। এখানে ফিরে এলে হয়তো হাওয়ার বদলে সুস্থ হতে পারেন। ফিরতি প্যাসেজের ব্যবস্থা করে পাঠানো যাক ৷” ফেরবার প্রস্তাবে উমি এত যে বেশি বিচলিত হয়ে উঠল, ও নিজে ভাবলে তার কারণ পাছে নীরদের উচ্চ উদ্দেশ্য মাঝখানে বাধা পায়। - মহািববুল্লন, "এবারকার মতাে টাকা পাঠাচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে এতে ডাকারবাবুর স্বাস্থা আরো शष्ट्र शांत ।”