পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুই বোন 8(ነዒ শর্মিলার মামা যতরকম অশাস্ত্রীয় চিকিৎসার সন্ধানে উৎসাহী। সম্প্রতি এক সন্ন্যাসীর সেবায় তিনি নিযুক্ত। যখন ডাক্তাররা বললে আর-কিছু করবার নেই তখন তিনি ধরে পড়লেন, হিমালয়ের ফেরত বাবাজির ওষুধ পরীক্ষা করতে হবে। কোন তিব্বতী শিকড়ের গুড়ো আর প্রচুর পরিমাণে দুধ, এই হচ্ছে উপকরণ । শশাঙ্ক কোনোরকম হাতুড়েদের সহ্য করতে পারত না । সে আপত্তি করলে। শৰ্মিলা বললে, “আর কোনো ফল হবে না, অন্তত মামা সাস্তুনা পাবেন।” দেখতে দেখতে ফল হল । নিশ্বাসের কষ্ট কমেছে, রক্ত ওঠা গেল বন্ধ হয়ে । সাত দিন যায়, পনেরো দিন যায়, শর্মিলা উঠে বসল। ডাক্তার বললে, মৃত্যুর ধাক্কাতেই অনেক সময় শরীর মরিয়া হয়ে উঠে শেষ ঠেলায় আপনাকে আপনি বঁাচিয়ে তোলে। শৰ্মিলা বেঁচে উঠল । ." তখন সে ভাবতে লাগল, “এ কী আপদ ! কী করি ! শেষকালে বেঁচে ওঠাই কি মরার বাড়া হয়ে দাড়াবে ।” ও দিকে উমি জিনিসপত্র গোছাচ্ছে । এখানে তার পালা শেষ হল । দিদি এসে বললে, “তুই যেতে পারবি নে ৷” “সে কী কথা ।” “হিন্দুসমাজে বোন-সতিনের ঘর কি কোনো মেয়ে কোনো দিন করে নি।” "ਇ" “লোকনিন্দা ! বিধির বিধানের চেয়ে বড়ো হবে লোকের মুখের কথা !” শশাঙ্ককে ডাকিয়ে বললে, “চলে আমরা যাই নেপালে । সেখানে রাজ-দরবারে তোমার কাজ পাবার কথা হয়েছিল- চেষ্টা করলেই পাবে । সে দেশে কোনো কথা উঠবে না ।” শৰ্মিলা কাউকে দ্বিধা করবার অবকাশ দিল না। যাবার আয়োজন চলছে। উর্মি তবু বিমর্ষ হয়ে কোণে কোণে লুকিয়ে বেড়ায় । শশাঙ্ক তাকে বললে, “আজ যদি তুমি আমাকে ছেড়ে যাও তা হলে কী দশা হবে ভেবে দেখো ।” । উর্মি বললে, “আমি কিছু ভাবতে পারি নে। তোমরা দুজনে যা ঠিক করবে। তাই হবে।” গুছিয়ে নিতে কিছুদিন লাগল। তার পর সময় যখন কাছে এসেছে। উর্মি বললে, “আর দিন-সাতেক অপেক্ষা করো, কাকাবাবুর সঙ্গে কাজের কথা শেষ করে আসি গে।” চলে গেল উর্মি। : এই সময়ে মথুর এল শর্মিলার কাছে মুখ ভার করে। বললে, “তোমরা চলে যােচ্ছ ঠিক সময়েই। তোমার সঙ্গে কথাবার্তা স্থির হয়ে যাবার পরেই আমি আপসে শশাঙ্কের জন্যে কাজ বিভাগ করে দিয়েছিলেম। আমার সঙ্গে ওর লাভলোকসানের দায় জড়িয়ে রাখি নি। সম্প্রতি কাজ গুটিয়ে নেবার উপলক্ষে শশাঙ্ক কদিন ধরে হিসাব বুঝে নিচ্ছিল। দেখা গেল তোমার টাকা সম্পূর্ণ ডুবেছে। তা ছাপিয়েও যা দেনা জমেছে তাতে বোধ হয় বাড়ি বিক্রি করতে হবে।” শর্মিলা জিজ্ঞাসা করলে, “সর্বনাশ এত দূর এগিয়ে চলেছিল— উনি জানতে পারেন নি।” মথুর বললে, “সর্বনাশ-জিনিসটা অনেক সময় বাজ পড়ার মতো, যে মুহুর্তে মারে তার আগে পর্যন্ত সম্পূর্ণ জানান দেয় না। ও বুঝেছিল ওর লোকসান হয়েছে। তখনো অল্পেই সামলে নেওয়া যেত। কিন্তু দুৰ্বদ্ধি ঘটল ; ব্যাবসার গলদ তাড়াতাড়ি শুধরে নেবে মনে করে আমাকে লুকিয়ে পাথুরে কয়লার ইটে তেজিমন্দি খেলা শুরু করলে। চড়ার বাজারে যা কিনেছে সস্তার বাজারে তাই বেচে দিতে হল। হঠাৎ আজ দেখলে হাউইয়ের মতো। ওর সব গেছে উড়ে পুড়ে, বাকি রইল ছাই। এখন ভগবানের কৃপায় নেপালে কাজ পেলে তোমাদের ভাবতে হবে না ।” শৰ্মিলা দৈন্যকে ভয় করে না। বরঞ্চ ও জানে, অভাবের দিনে স্বামীর সংসারে ওর স্থান আরো