পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী ইন্দ্রাণী।” হায় রে, যৌবন তো আজও ফুরোয় নি। কিন্তু চলে গেল তার মহিমা । তাই তো ইন্দ্রাণী আপন আসন আজ ভরাতে পারছে না । সেদিন ওর মনে কোথাও কি ছিল লেশমাত্র ভয় । সে যেখানে ছিল সেখানে আর কেউই ছিল না, ওর আকাশে ও ছিল সকালবেলার অরুণোদয়ের মতো পরিপূর্ণ একা। আজ কোনোখানে একটু ছায়া দেখলেই বুক দূরদূর করে উঠছে, নিজের উপর আর ভরসা নেই। নইলে কে ঐ সরলা, কিসের ওর গুমার। আজ তাকে নিয়েও সন্দেহে মন দুলে উঠছে। কে জানত বেলা না ফুরোতেই এত দৈন্য ঘটবে কপালে। এতদিন ধরে এত সুখ এত গীেরব অজস্র দিয়ে অবশেষে বিধাতা এমন করে চোরের মতো সিদ্ধ কেটে দত্তাপহরণ করলেন । “রোশনি, শুনে যা ।” *ချီရဲ (ခ်ျချဲ |? “তোদের জামাইবাবু একদিন আমাকে ডাকত ‘রঙমহলের রঙ্গিনী । দশ বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে, সেই রঙ তো এখনাে ফিকে হয় নি, কিন্তু সেই রঙমহল ?” “যাবে কোথায়, আছে তোমার মহল । কাল তুমি সারারাত ঘুমোও নি, একটু ঘুমোও তো, পায়ে হাত বুলিয়ে দিই।” “রোশনি, আজ তো পূর্ণিমার কাছাকাছি। এমন কত জ্যোৎস্নারাত্রে ঘুমোই নি । দুজনে বেড়িয়েছি বাগানে। সেই জাগা আর এই জাগা । আজ তো ঘুমোতে পারলে বাচি, কিন্তু পোড়া ঘুম আসতে চায় না যে ” “একটু চুপ করে থাকো দেখি, ঘুম আপনি আসবে।” “আচ্ছা, ওরা কি বাগানে বেড়ায় জ্যোৎসারাত্রে ।” “ভোরবেলাকার চালানের জন্য ফুল কাটতে দেখেছি। বেড়াবে কখন, সময় কোথায় ।” “মালীগুলো আজকাল খুব ঘুমোচ্ছে। তা হলে মালীদের বুঝি জাগায় না। ইচ্ছে করেই ?” “তুমি নেই এখন ওদের গায়ে হাত দেয় কার সাধ্যি ।” “ঐ না শুনলেম গাড়ির শব্দ ?” “হা, বাবুর গাড়ি এল।” “হাত-আয়নাটা এগিয়ে দে। বড়ো গোলাপটা নিয়ে আয় ফুলদানি থেকে । সেফটিপিনের বাক্সটা কোথায় দেখি। আজ আমার মুখ বড়ো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। যা তুই ঘর থেকে ৷” “যাচ্ছি, কিন্তু দুধ বার্লি পড়ে আছে, খেয়ে নাও লক্ষ্মৗটি ।” “থাক পড়ে, খাব না।” “দু দাগ ওষুধ তোমার আজ খাওয়া হয় নি।” “তোর বকতে হবে না, তুই যা বলছি, ঐ জানলাটা খুলে দিয়ে যা ।” আয়া চলে গেল । ঢং ঢেং করে তিনটে বাজল। আরক্ত হয়ে এসেছে রোদদুরের রঙ, ছায়া হেলে পড়েছে পুব দিকে, বাতাস এল দক্ষিণ থেকে, ঝিলের জল উঠল টল টল করে। মালীরা লেগেছে। কাজে, নীরজা দূর থেকে যতটা পারে। তাই দেখে । , দ্রুতপদে আদিত্য ছুটে এল ঘরে । হাত জোড়া বাসন্তী রঙের দেশী ল্যাবার্নম ফুলের মঞ্জরীতে । তাই দিয়ে ঢেকে দিল নীরজার পায়ের কাছটা । বিছানায় বসেই তার হাত চেপে ধরে বললে, “আজি কতক্ষণ তোমাকে দেখি নি। নীরু।” শুনে নীরজা আর থাকতে পারলে না, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। আদিত্য খাটের থেকে নেমে মেজের উপর হাঁটু গেড়ে নীরজার গলা জড়িয়ে ধরলে, তার ভিজে গালে চুমো খেয়ে বললে, “মনে মনে তুমি নিশ্চয় জান আমার দোষ ছিল না ।” “অত নিশ্চয় করে কী করে জানব বলে । আমার কি আর সেদিন আছে।” “দিনের কথা হিসেব করে কী হবে। তুমি তো আমার সেই তুমিই আছ।” “আজ যে আমার সকলতাতেই ভয় করে। জাের পাই নে যে মনে ৷”