পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ळ् 8ዔ (፩ বললে, “সকালবেলায় বোধ হয় সে জপতপ কিছু করে, আমার মতো ভজনপূজনহীন স্লেচ্ছ তো 可s” “চা খাওয়ার পরে আজ বুঝি অর্কিড-ঘরে তাকে নিয়ে গিয়েছিলে ?” “হা, কিছু কাজ ছিল, ওকে বুঝিয়ে দিয়েই ছুটতে হল দোকানে।” “আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সরলার সঙ্গে রমেনের বিয়ে দাও-না কেন ।” “ঘটকালি কি আমার ব্যাবসা ।” “না, ঠাট্টা নয়। বিয়ে তো করতেই হবে, রমেনের মতো পাত্র পাবে কোথায় ।” “পাত্ৰ আছে এক দিকে, পাত্রীও আছে আর-এক দিকে, মাঝখানটাতে মন আছে কি না সে-খবর নেবার ফুরসত পাই নি। দূরের থেকে মনে হয় যেন ঐখানটাতেই খটকা ।” একটু ঝাজের সঙ্গে বললে নীরজা, “কোনো খটকা থাকত না যদি তোমার সত্যিকার আগ্ৰহ থাকত ।” “বিয়ে করবে। অন্য পক্ষ, সত্যিকার আগ্রহটা থাকবে একা আমার, এটাতে কি কাজ চলে। তুমি চেষ্টা দেখে-না ।” “কিছুদিন গাছপালা থেকে ঐ মেয়েটার দৃষ্টিটাকে ছুটি দাও দেখি, ঠিক জায়গায় আপনি চো পড়বে |” । ጴ শুভদৃষ্টির আলােতে গাছপালা পাহাড়পর্বত সমস্তই স্বচ্ছ হয়ে যায়। ও একজাতের একসাের আর " “মিছে বকছ । আসল কথা, তোমার ইচ্ছে নয় বিয়েটা ঘটে ।” “এতক্ষণে ধরেছ ঠিক । সরলা গেলে আমার বাগানের দশা কী হবে বলে । লাভ-লোকসানের কথাটাও ভাবতে হয় । ও কী ও, হঠাৎ তোমার বেদনােটা বেড়ে উঠল নাকি ৷” উদবিগ্ন হয়ে উঠল আদিত্য । নীরজা রুক্ষ গলায় বললে, “কিছু হয় নি। আমার জন্যে তোমাকে अङ बाख्छ श्0ङ शुद क्रा ।' স্বামী যখন উঠি-উঠি করছে, সে বলে উঠল, “আমাদের বিয়ের পরেই ঐ অর্কিড-ঘরের প্রথম পত্তন, ভুলে যাও নি তো সে কথা ? তার পরে দিনে দিনে আমরা দুজনে মিলে ঐ ঘরটাকে সাজিয়ে তুলেছি। ওটাকে নষ্ট করতে দিতে তোমার মনে একটুও লাগে না !” আদিত্য বিস্মিত হয়ে বললে, “সে কেমন কথা । নষ্ট হতে দেবার শখ আমার দেখলে কোথায় ।” উত্তেজিত হয়ে নীরজা বললে, “সরলা কী জানে ফুলের বাগানের ” “বল কী ! সরলা জানে না ? যে-মেসোেমশায়ের ঘরে আমি মানুষ, তিনি যে সরলার জেঠামশায় । তুমি তো জান তীরই বাগানে আমার হাতেখড়ি । জেঠামশায় বলতেন, ফুলের বাগানের কাজ মেয়েদেরই, আর গোরু দেওয়ানো । তার সব কাজে ও ছিল তীর সঙ্গিনী।” “আর তুমি ছিলে সঙ্গী।” "ছিলেম বৈকি। কিন্তু আমাকে করতে হত কলেজের পড়া, ওর মতো অত সময় দিতে পারি নি। ওকে, মেসোমশায় নিজে পড়াতেন।” : “সেই বাগান নিয়ে তোমার মেসোেমশায়ের সর্বনাশ হয়ে গেল । এমনই ও-মেয়ের পয় । আমার তো। তাই ভয় করে। অলক্ষুণে মেয়ে। দেখে-না মাঠের মতো কপাল, ঘোড়ার মতন লাফিয়ে চলন। মেয়েমানুষের পুরুষালি বুদ্ধিটা ভালো নয়। ওতে অকল্যাণ ঘটায়।” । “তোমার আজ কী হয়েছে বলে তো নীরু। কী কথা বলছি। মেসোমশায় বাগান করতেই জানতেন, ব্যাবসা করতে জানতেন না। ফুলের চাষ করতে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়, নিজের লোকসান করতেও তার সমকক্ষ কেউ ছিল না । সকলের কাছে তিনি নাম পেতেন, দাম পেতেন না। বাগান করবার জন্যে আমাকে যখন মূলধনের টাকা দিয়েছিলেন আমি কি জানতুম তখনই তার তহবিল ডুবোড়বো। আমার একমাত্র সত্ত্বনা এই যে, তার মরবার আগেই সমস্ত দিয়েছি শোধ করে।”