পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

瓦问邻 8ԳԳ মুখ গুজে অশান্ত হয়ে কঁদিতে লাগল। স্তম্ভিত হয়ে গেল আদিত্য । ঠিক যেন এতদিন স্বপ্নে চলছিল, ঠোকর খেয়ে উঠল চমকে । এ কী ব্যাপার। বুঝতে পারল এই কান্না অনেকদিনকার । বেদনার ঘূর্ণিবাতাস নীরজার অন্তরে অন্তরে বেগ পেয়ে উঠছিল দিনে দিনে, আদিত্য জানতে পারে নি মুহুর্তের জন্যেও । এমন নির্বোধি যে, মনে করেছিল, সরলা বাগানের যত্ন করতে পারে এতে নীরজা খুশি । বিশেষত ঋতুর হিসাব করে বাছাই করা ফুলে কেয়ারি সাজাতে ও অদ্বিতীয়। আজ হঠাৎ মনে পড়ল, একদিন যখন কোনো উপলক্ষে সরলার প্রশংসা করে ও বলেছিল, “কামিনীর বেড়া এমন মানানসই করে আমি তো লাগাতে পাৱতুম না”, তখন তীব্ৰ হেসে বলেছে। নীরজ, “ওগো মশায়, উচিত পাওনার চেয়ে বেশি দিলে আখেরে মানুষের লোকসান করাই হয় ।” আদিত্যের আজ মনে পড়ল, গাছপালা সম্বন্ধে কোনোমতে সরলার একটা ভুল যদি ধরতে পারত নীরজা উচ্চহাস্যে কথাটাকে ফিরে ফিরে মুখরিত করে তুলত । স্পষ্ট মনে পড়ল, ইংরেজি বই খুঁজে খুঁজে নীরজা মুখস্থ করে রাখত অল্পপরিচিত ফুলের উদ্ভট নাম ; ভালোমানুষের মতো জিজ্ঞাসা করত সরলকে, যখন সে ভুল করত, তখন থামতে চাইত না ওর হাসির ল্লোল ; “ভারি পণ্ডিত, কে না জানে ওর নাম ক্যাসিয়া জাভানিকা | আমার হলা মালীও বলতে পারত ।” আদিত্য অনেকক্ষণ ধরে বসে ভাবলে । তার পরে হাত ধরে বললে, “কেঁদো না নীরু, বলে কী করব । তুমি কি চাও সরলাকে বাগানের কাজে না রাখি ।” নীরজা হাত ছিনিয়ে নিয়ে বললে, “কিছু চাই নে, কিছু না, ও তো তোমারই বাগান । তুমি যাকে খুশি রাখতে পারো আমার তাতে কী ।” “নীরু, এমন কথা তুমি বলতে পারলে, আমারই বাগান ? তোমার নয় ? আমাদের মধ্যে এই ভাগ হয়ে গোল কবে থেকে ৷” “যবে থেকে তোমার রইল বিশ্বের আর-সমস্ত-কিছু আর আমার রইল কেবল এই ঘরের কোণ । আমার এই ভাঙা প্ৰাণ নিয়ে দাড়াবা কিসের জোরে তোমার ঐ আশ্চর্য সরলার সামনে । আমার সে শক্তি আজ কোথায় যে তোমার সেবা করি, তোমার বাগানের কাজ করি ?” । “নীরু, তুমি তো কতদিন এর আগে আপনি সরলকে ডেকে পাঠিয়েছ, নিয়েছ। ওর পরামর্শ। মনে। নেই কি এই কয়েক বছর আগে বাতাবি লেবুর সঙ্গে কলম্বা লেবুর কলম বেঁধেছ দুইজনে, আমাকে আশ্চর্য করে দেবার জন্যে ।” “তখন তো ওর এত গুমার ছিল না । বিধাতা যে আমারই দিকে আজ অন্ধকার করে দিলে, তাই তো তোমার কাছে হঠাৎ ধরা পড়ছে, ও এত জানে, ও তত জানে, আর্কিড চিনতে আমি ওর কাছে লাগি নে । সেদিন তো এ-সব কথা কোনোদিন শুনি নি। তবে আজ আমার এই দুর্ভাগ্যের দিনে কেন দুজনের তুলনা করতে এলে। আজ আমি ওর সঙ্গে পারব কেন। মাপে সমান হব কী নিয়ে।” "নীরু, আজ তোমার কাছে এই যা-সব শুনছি। তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলুম না । মনে হচ্ছে। এ যেন আমার নীরুর কথা নয়, এ যেন আর-কেউ ।” "নী গো না, সেই নীরুই বটে। তার কথা এত দিনেও তুমি বুঝলে না। এই আমার সব চেয়ে *ান্তি । বিয়ের পর যেদিন আমি জেনেছিলেম তোমার বাগান তোমার প্রাণের মতো প্রিয়, সেদিন থেকে ঐ বাগান আর আমার মধ্যে ভেদ রাখি নি একটুকুও । নইলে তোমার বাগানের সঙ্গে আমার ভীষণ ঝগড়া বাধত, ওকে সইতে পারতুম না। ও হত আমার সতিন । তুমি তো জান আমার দিন-রাতের সাধনা। জান কেমন করে ওকে মিলিয়ে নিয়েছি আমার মধ্যে। একেবারে এক হয়ে গেছি । ওর সঙ্গে ।” "জানি বৈকি। আমার সবা-কিছুকে নিয়েই যে তুমি।” - "ও-সব কথা রাখে। আজ দেখলুম। ঐ বাগানের মধ্যে অনায়াসে প্রবেশ করলে আর-একজন। কোথাও একটুও ব্যথা লািগল না। আমার দেহখানাকে চিরে ফেলবার কথা কি মনে করতেও পারতে,