পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা (S\O ভারতবর্ষের প্রাচীন তপোবনে ব্ৰহ্মবিদ্যাপরায়ণ গুরু মুক্তিকাম ছাত্রগণকে যে-মন্ত্রে আহবান করিয়াছিলেন সে-মন্ত্র বহুদিন এ দেশে ধ্বনিত হয় নাই। আজ আমাদের বিদ্যালয় সেই গুরুর স্থানে দণ্ডায়মান হইয়া ব্ৰহ্মপুত্র এবং ভাগীরথীর তীরে তীরে এই বাণী প্রেরণ করিতেছেন : যথাপঃ প্ৰবত যান্তি যথা মাসা অহৰ্জরাম, এবং মাং ব্ৰহ্মচারিণো ধাতরায়স্তু সর্বতঃ স্বাহা । জলসকল যেমন নিম্নদেশে গমন করে, মাসসকল যেমন সংবৎসরের দিকে ধাবিত হয়, তেমনি সকল দিক হইতে ব্ৰহ্মচারিগণ আমার নিকটে আসুন— স্বাহা । সহ বীর্যং করবাবহৈ । আমরা উভয়ে মিলিত হইয়া যেন বীৰ্য প্ৰকাশ করি । তেজস্বিনাবধীতমস্তু । তেজস্বিভাবে আমাদের অধ্যয়ন-অধ্যাপনা হউক । মা বিদ্বিষাবহৈ । আমরা পরস্পরের প্রতি যেন বিদ্বেষ না করি । ভদ্রন্নো অপি বাতয় মনঃ । , হে দেব, আমাদের মনকে মঙ্গলের প্রতি সবেগে প্রেরণ করে । ভাদ্র ১৩১৩ আবরণ পায়ের তেলোটি এমন করিয়া তৈরি হইয়াছিল যে, খাড়া হইয়া দাড়াইয়া পৃথিবীতে চলিবার পক্ষে এমন ব্যবস্থা আর হইতে পারে না । যেদিন হইতে জুতা পরিতে শুরু করিলাম, সেই দিন হইতে তেলোকে মাটির সংস্রব হইতে বঁাচাইয়া তাহার প্রয়োজনকেই মাটি করিয়া দেওয়া গেল। পদতল এতদিন অতি সহজেই আমাদের ভার বহন করিতেছিল, এখন হইতে পদতলের ভার আমাদিগকে লইতে হইল । এখন খালিপায়ে পথে চলিতে হইলে পদতল আমাদের সহায় না হইয়া পদে পদে দুঃখের কারণ হইয়া উঠে । শুধু তাই নয়, ওটাকে লইয়া সর্বদাই সতর্ক থাকিতে হয় ; মনকে নিজের পদতলের সেবায় নিযুক্ত না রাখিলে বিপদ ঘটে । ওখানে ঠাণ্ডা লাগিলেই হাঁচি, জল লাগিলেই জ্বর-অবশেষে মোজা, চটি, গোড়তলা জুতা, বুট প্রভৃতি বিবিধ উপচারে এই প্রত্যঙ্গটির পূজা করিয়া ইহাকে সকল কর্মের বাহির করিয়া দেওয়া হয়। ঈশ্বর আমাদিগকে খুর দেন নাই বলিয়া ইহা তাহার প্রতি একপ্রকার অনুযোগ । - এইরূপে বিশ্বজগৎ এবং আমাদের স্বাধীনশক্তির মাঝখানে আমরা সুবিধার প্রলোভনে অনেকগুলা বেড়া তুলিয়া দিয়াছি। এইরূপে সংস্কার ও অভ্যাসক্রমে সেই কৃত্রিম আশ্রয়গুলাকেই আমরা সুবিধা এবং নিজের স্বাভাবিক শক্তিগুলাকেই অসুবিধা বলিয়া জানিয়াছি। কাপড় পরিয়া পরিয়া এমনি করিয়া তুলিয়াছি যে, কাপড়টাকে নিজের চামড়ার চেয়ে বড়ো করা হইয়াছে। এখন আমরা বিধাতার সৃষ্ট আমাদের এই আশ্চর্য সুন্দর অনাবৃত শরীরকে অবজ্ঞা করি। কিন্তু কাপড়জুতাকে একটা অন্ধসংস্কারের মতো জড়াইয়া ধরা আমাদের এই গরম দেশে ছিল না। এক তো সহজেই আমাদের কাপড় বিরল ছিল ; তাহার পরে, বালককালে ছেলেমেয়েরা অনেকদিন পর্যন্ত কাপড়জুতা না পরিয়া উলঙ্গ শরীরের সঙ্গে উলঙ্গ জগতের যোগ অসংকোচে অতি সুন্দরভাবে রক্ষা করিয়াছে। এখন আমরা ইংরেজের নকল করিয়া শিশুদেহের জন্যও লজ্জাবোধ করিতে আরম্ভ করিয়াছি। শুধু বিলাতফেরত নহে, শহরবাসী সাধারণ বাঙালি গৃহস্থও আজকাল বাড়ির বালককে \b\bbr