পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V Obr রবীন্দ্র-রচনাবলী উকারের লোপ হইলেও পূর্ববতী আ উচ্চারণস্থলে ও হইবে ; যথা, হউন— হন, রাহুন— রািন, কহুন- ক’ন ইত্যাদি । ৮ম । রফলা-বিশিষ্ট বর্ণের অ লিপ্ত থাকিলে তাহা ‘ও’ হইয়া যায় ; যথা, শ্রবণ ভ্ৰম ভ্ৰমণ বীজ গ্ৰহ ত্ৰস্ত প্রমাণ প্রতাপ ইত্যাদি। কিন্তু য় পরে থাকিলে অ-এর বিকার হয় না ; যথা, ক্রয় ত্রয় শ্রয়। দুয়েকটি ছাড়া যতগুলি নিয়ম উপরে দেওয়া হইয়াছে, তাহাতে বুঝাইতেছে। ই কিংবা উ-এর পূর্বে অ-এর উচ্চারণ ‘ও’ হইয়া যায় । এমন-কি, ইকার উকার অপভ্রংশে লোপ হইলেও এ নিয়ম খাটে । এমন-কি, যফলা ও ঋফলায় ইকারের সংস্রব আছে বলিয়া তাহার পূর্বেও অ-এর বিকার হয়। ইকারের পক্ষে যেমন যফলা, উকারের পক্ষে তেমনই ব্যফলা- উ-এ অ-এ মিলিয়া ব্যফলা হয় ; অতএব আমাদের নিয়মানুসারে বফলার পূর্বেও অকারের বিকার হওয়া উচিত । কিন্তু বফলার উদাহরণ অধিক সংগ্ৰহ করিতে পারি নাই বলিয়া এ কথা জোর করিয়া বলিতে পারিতেছি না। কিন্তু যে দুই-তিনটি মনে আসিতেছে তাহাতে আমাদের কথা খাটে ; যথা, অন্বেষণ ধন্বন্তরি মন্বন্তর । এইখানে গুটিকতক ব্যতিক্রমের কথা বলা আবশ্যক | ই উ যফলা ঋফলা ক্ষ পরে থাকিলেও অভাবার্থসূচক অ-এর বিকার হয় না ; যথা, অকিঞ্চন অকুতোভয় অখ্যাতি অনুত অক্ষয় । নিম্নলিখিত শব্দগুলি নিয়ম মানে না, অর্থাৎ ই উ যফলা ঋফলা ইত্যাদি পরে না থাকা সত্ত্বেও ইহাদের আদ্যক্ষরবর্তী অ ‘ও’ হইয়া যায় ; মন্দ মন্ত্র মন্ত্রণা নখ মঙ্গল ব্ৰহ্ম । আমি এই প্রবন্ধে কেবল আদ্যক্ষরবর্তী অকার উচ্চারণের নিয়ম লিখিলাম। মধ্যাক্ষর বা শেষােক্ষরের নিয়ম অবধারণের অবসর পাই নাই। মধ্যক্ষরে যে প্রথম অক্ষরের নিয়ম খাটে না, তাহা একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা যাইবে । বল শব্দে ব-এর সহিত সংযুক্ত আকারের কোনো পরিবর্তন হয় না, কিন্তু কেবল শব্দের ব-এ হ্রস্ব ওকার লাগে । ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের নিয়মও সময়াভাবে বাহির করিতে পারি নাই । সাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়া দেওয়াই আমার এই প্ৰবন্ধের উদ্দেশ্য । যদি কোনো অধ্যবসায়ী পাঠক রীতিমত অন্বেষণ করিয়া এই-সকল নিয়ম নির্ধারণ করিতে পারেন, তবে আমাদের বাংলা ব্যাকরণের একটি অভাব দূর হইয়া যায় । । এখানে ইহাও বলা আবশ্যক যে, প্রকৃত বাংলা ব্যাকরণ একখানিও প্রকাশিত হয় নাই। সংস্কৃত ব্যাকরণের একটু ইতস্তত করিয়া তাহাকে বাংলা ব্যাকরণ নাম দেওয়া হয় । বাংলা ব্যাকরণের অভাব আছে, ইহা পূরণ করিবার জন্য ভাষাতত্ত্বানুরাগী লোকের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত । আশ্বিন ১২৯২ স্বরবর্ণ অ বাংলা শব্দ উচ্চারণের কতকগুলি বিশেষ নিয়ম পাওয়া যায়, পূর্বে তাহার আলোচনা করিয়াছি । তাহারই অনুবৃত্তিক্রমে আরো কিছু বলিবার আছে, তাহা এই প্রবন্ধে অবতারণা করিতে ইচ্ছা করি । কিয়ৎপরিমাণে পুনরুক্তি পাঠকদিগকে মার্জনা করিতে হইবে। বাংলায় প্রধানত ই এবং উ এই দুই স্বরবর্ণের প্রভাবেই অন্য স্বরবর্ণের উচ্চারণবিকার ঘটিয়া থাকে | গত এবং গতি এই দুই শব্দের উচ্চারণভেদ বিচার করিলে দেখা যাইবে, গত শব্দের গ-এ কোনো পরিবর্তন ঘটে নাই, কিন্তু ইকার পরে থাকতে গতি শব্দের গ-এ ওকার সংযোগ হইয়াছে । কণা এবং কণিকা, ফণা এবং ফণী, স্থল এবং স্থলী তুলনা করিয়া দেখো । উকার পরে থাকিলেও প্রথম অক্ষরবতী স্বরবর্ণের এইরূপ বিকার ঘটে । কল এবং কলু, সার এবং সরু, বট এবং বটু তুলনা করিয়া দেখিলেই আমার কথার প্রমাণ হইবে ।