পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব Wり>(? থাকে। কলস দুই সিলেবলে গঠিত, কল-4-অস, কিন্তু প্রথম সিলেবলের পরবতী আকারের লোপ হয় নাই । ঘটক শব্দের দুই সিলেবল ঘটু-+অক, এখানেও অকার উচ্চারিত হয় । । কিন্তু এই প্রসঙ্গে চিন্তা করিয়া দেখা যায়, বীমস সাহেবের নিয়মকে আর-একটু সংকীর্ণ করিয়া আনিলেই তাহার সার্থকতা পাওয়া যাইতে পারে। r আঁচল এবং আঁচুলা, আপন এবং আপনি, চামচ এবং চামচে, আঁচড় এবং আঁচুড়ানাে, ঢোলক এবং ঢলকো, পরশ এবং পরশু, দৃষ্টান্তগুলি আলোচনা করিলে দেখা যায় যে, পরবর্তী সিলেবল স্বরান্ত হইলে পূর্ব সিলেবলের অকার লোপ পায়, পরন্তু হসন্তের পূর্ববর্তী অকার কিছুতেই লোপ পায় না। কিন্তু পূর্বেদ্ধত বনবাস, জনরব বলবান প্রভৃতি শব্দে এ নিয়ম খাটে নাই। তাহাতে অকার ও আকারের পূর্ববর্তী অ লোপ পায় নাই। অথচ, পর্যকলা আলপনা অবসর (লিখিত ভাষায় নহে) প্রভৃতি প্রচলিত কথায় বীমসের নিয়ম খাটে । ইহা হইতে বুঝা যায়, যে-সকল সংস্কৃত শব্দ ভাষায় নূতন প্রবেশ করিয়াছে এবং জনসাধারণের দ্বারা সর্বদা ব্যবহৃত হয় না, তাহাতে সংস্কৃত উচ্চারণের নিয়ম এখনো রক্ষিত হয়। কিন্তু “পাঠশালা প্রভৃতি সংস্কৃত কথা যাহা চাষাভুষারাও নিয়ত ব্যবহার করে, তাহাতে বাংলাভাষার নিয়ম সংস্কৃত নিয়মকে পরাস্ত করিয়াছে । বীমস লিখিয়াছেন, বিশেষণ শব্দে সিলেবলের অন্তর্বর্তী আকারের লোপ হয় না ; যথা, ভাল ছোট বন্ড | - রামমোহন রায় ১৮৩৩ খ্রীস্টাব্দে যে গৌড়ীয় ব্যাকরণ রচনা করেন, তাহাতে তিনিও লেখেন : গৌড়ীয় ভাষায় অকারান্ত বিশেষণ শব্দ অকারান্ত উচ্চারণ হয়, যেমন ছোট খািট ; এতদভিন্ন তাবৎ অকারান্ত শব্দ হলন্ত উচ্চারিত হয়, যেমন ঘট পটু রাম রামদাস উত্তম সুন্দর ইত্যাদি । রামমোহন রায়ের উদ্ধৃত দৃষ্টান্ত র্তাহার নিয়মকে অপ্রমাণ করিতেছে তাহা তিনি লক্ষ করেন নাই। উত্তম ও সুন্দর শব্দ বিশেষণ শব্দ। যদি কেহ বলেন উহা সংস্কৃত শব্দ, তথাপি খাটি বাংলা শব্দেও ব্যতিক্রম মিলিবে ; যথা, নরম গরম । এ কথা স্বীকার করিতে হইবে, খাটি বাংলায় দুই অক্ষরের অধিকাংশ বিশেষণ শব্দ হলন্ত নহে। প্রথমেই মনে হয়, বিশেষণ শব্দ বিশেষরূপে অকারান্ত উচ্চারিত হইবে, এ নিয়মের কোনো সার্থকতা নাই । অতএব, ছোট বড় ভাল প্রভৃতি বিশেষণ শব্দ যে সাধারণ বাংলা শব্দের ন্যায় হসন্ত হয় নাই, তাহার কারণটা ঐ শব্দগুলির মূল সংস্কৃত শব্দে পাওয়া যাইবে । ‘ভালো’ শব্দ ভদ্র শব্দজ, বড়ো” বৃদ্ধ হইতে উৎপন্ন, “ছােটাে ক্ষুদ্র শব্দের অপভ্রংশ। মূল শব্দগুলির শেষবৰ্ণ যুক্ত— যুক্তবর্ণের অপভ্রংশে হসন্ত বর্ণ না হওয়ারই সম্ভাবনা ৷ - কিন্তু এ নিয়ম খাটে না । নৃত্যু-র অপভ্রংশ নাচ, পঙ্ক— পাক, অঙ্ক— আঁক, রঙ্গ— রাং, ভট্টভাট, হস্ত- হাত, পঞ্চ— পাচ ইত্যাদি । অতএব নিশ্চয়ই বিশেষণের কিছু বিশেষত্ব আছে। সে বিশেষত্ব আরো চােখে পড়ে যখন দেখা যায়, বাংলার অধিকাংশ দুই অক্ষরের বিশেষণ, যাহা সংস্কৃত মূল শব্দ অনুসারে অকারান্ত হওয়া উচিত ছিল, তাহা আকারান্ত হইয়াছে। যথা : সহজ- সোজা, মহৎ- মোটা, রুগ্ন- রোগা, ভগ্ন- ভাঙা, শ্বেত-শাদা, অভিষিক্তভিজা, খঞ্জ- খোড়া, কাণ— কাণ, লম্ব- লম্বা, সুগন্ধ- সোধা, বক্ৰ— বঁকা, তিক্ত- তিতা, gS DS BDDS BBS BBS S uBDS DDDS DBDBD SS দ্রষ্টব্য এই যে, ‘কৰ্ণ হইতে বিশেষ্য শব্দ কান হইয়াছে, অথচ কান শব্দ হইতে বিশেষণ শব্দ কানা হইল । বিশেষ্য শব্দ হইল ফাক, বিশেষণ হইল ফাঁকা ; বঁাক শব্দ বিশেষ্য, বাকা শব্দ বিশেষণ। সংস্কৃত ভাষায় জ প্রত্যয়যোগে যে-সকল বিশেষণ পদ নিম্পন্ন হয়, বাংলায় তাহা প্রায়ই আকােরাস্ত বিশেষণ পদে পরিণত হয় ; ছিন্নবস্ত্র বাংলায়— ছেড়া বস্ত্ৰ, ধূলিলিপ্ত শব্দ বাংলায়— ধুলোলেপা, । কৰ্ণকর্তিত— কানকাটা ইত্যাদি । -