পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VNOV রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু শুদ্ধমাত্র বিশেষণরূপে হইতে পারে ; যেমন, থ্যাৎলা মাংস, কোকড়া চুল, বাঘ-আঁচুড়া গাছ, নেই আকড়া লোক (ন্যায়-আঁকড়া অর্থাৎ নৈয়ায়িক তার্কিক)। ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বিশেষণের দৃষ্টান্ত উপরে দেওয়া গেল। আ প্রত্যয়যোগে নিম্পন্ন পদাৰ্থবাচক ও গুণবাচক বিশেষ্যের দৃষ্টান্ত দুই-একটি মনে পড়িতেছে ; তাওয়া (যাহাতে রুটিতে তা দেওয়া যায়), দাওয়া (দাবি, অর্থাৎ দাও বলিবার অধিকার), আছড়া (আঁটি হইতে ধান আছড়াইয়া লইয়া যাহা অবশিষ্ট থাকে) । বিশিষ্ট অর্থে আ প্রত্যয় হইয়া থাকে ; যথা তেলবিশিষ্ট তেলা, বেতালবিশিষ্ট বেতালা, বেসুরবিশিষ্ট বেসুরা, জলময় জলা, নুনবিশিষ্ট নোনা (লবণাক্ত), আলোকিত আলী, রোগযুক্ত রোগা, মলযুক্ত ময়লা, চালাযুক্ত চালা (ঘর), মাটিযুক্ত মাটিয়া (মেটে), বালিযুক্ত বালিয়া (বেলে), দাড়িযুক্ত দাড়িয়া (দৌড়ে) । বৃহৎ অর্থে আ প্রত্যয় ; যথা, হাঁড়া (ক্ষুদ্ৰ হাঁড়ি) ; নোড়া (লোষ্ট্র হইতে ; ক্ষুদ্র, নুড়ি) । আন প্ৰত্যয় আন প্রত্যয়ের দৃষ্টান্ত : যোগান চাপান চালান জানান হেলান ঠেসান মানান। এগুলি ছাড়া একপ্রকার বিশেষ পদবিন্যাসে এই আন প্রত্যয়ের ব্যবহার দেখা যায়। ঠকা হইতে ঠকান শব্দ বাংলায় সচরাচর দেখা যায় না, কিন্তু আমরা বলি, ভারি ঠকান ঠকেছি, অথবা, কী ঠিকানটাই ঠকিয়েছে। সেইরূপ, কী পিটানটাই পিটিয়েছে, কী ঢলানটাই ঢলিয়েছে, এরূপ বিস্ময়সূচক পদবিন্যাসের বাহিরে পিটান। ঢলান ব্যবহার হয় না। উপরের দৃষ্টান্তগুলি ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। পদার্থবাচকের দৃষ্টান্তও আছে ; যথা, বানান উঠান উনান উজান (উর্ধ্ব-উঝ+আন) ঢালান (জলের) মাচান (মঞ্চ) । আন+অ প্রত্যয় অনুগ্রতাদের উত্তর পুলক অপ্রতার কবিয়া বাংলায় অনেকগুলি ক্লিয়াবাচক বিশেষ বিশেষত্ব হয় । পূর্বে দেখানো গিয়াছে, একমাত্রিক ধাতুর উত্তর আ প্ৰত্যয় করিয়া ক্রিয়াবাচক দুই-অক্ষরের বিশেষ্য বিশেষণ সিদ্ধ হয় ; যেমন, ধরা মারা ইত্যাদি । বহুমাত্রিকে আ প্রত্যয় না হইয়া আন ও তদুত্তরে অ প্রত্যয় হয় ; যেমন, চুলকান (উচ্চারণ চুলকানো) কামড়ান (কামড়ানো) ছটফটান (ছটফটানো) ইত্যাদি । কিন্তু সাধারণত নৈমিত্তিক ক্রিয়াপদকেই ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বিশেষণে পরিণত করিতে আন+অ প্ৰত্যয় ব্যবহৃত হয় ; যেমন করা শব্দ হইতে নৈমিত্তিক অর্থে করান, বলা হইতে বলান । ইহাই সাধারণ নিয়ম, কিন্তু কয়েকটি ব্যতিক্রমও দেখা যায় ; যেমন পড়া হইতে নৈমিত্তিক পাড়া, । চলা হইতে চালা, গলা হইতে গালা, নড়া হইতে নাড়া, জ্বলা হইতে জ্বালা, মরা হইতে মারা, বহা হইতে বাহা, জরা হইতে জারা । কিন্তু পড়া হইতে পড়ান, নড়া হইতে নড়ান, চলা হইতে চলান, ইহাও হয়। এমন-কি, নৈমিত্তিক ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যশব্দ চালা নাড়া পাড়া প্রভৃতির উত্তর পুনশ্চ আন+অ যোগ করিয়া চালান পাড়ান নাড়ান হইয়া থাকে । কিন্তু তাকান গড়ান (বিছানায়) আঁচনি প্রভৃতি অনৈমিত্তিক শব্দ সম্বন্ধে কী বুঝিতে হইবে। তাকা । গড়া আঁচা, হইল না কেন । তাহার কারণ, এইগুলির মূল ধাতু একমাত্রিক নহে। দেখ, একমাত্রিক ধাতু, তাহা হইতে দেখা হইয়াছে ; কিন্তু তাকান শব্দের মূল ধাতুটি তাক নহে, তাহা তাকা, সেইজন্যই উক্ত ধাতুকে বিশেষ্য করিতে আন+অ প্রত্যয়ের প্রয়ােজন হইয়াছে। নামধাতুগুলিও আন+অ প্রত্যয়ের অপেক্ষা রাখে ; যেমন, লাথি হইতে লাথান, পিঠ হইতে পিঠান (পিটানো), হাত হইতে হাতান । মূল ধাতু বহুমাত্রিক কি না, তাহার পরীক্ষার অন্য উপায় আছে। অনুজ্ঞায় আমরা দেখ ধাতুর উত্তর