পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব \ტ8 €l কানে ও বলিতেছে, ওর কানে এ বলিতেছে। গলাগলি বলিতে বুঝায়, এর গলা ও, ওর গলা এ ধরিয়াছে। এই শ্রেণীর শব্দের তালিকা এইখানেই দেওয়া যাক ডলাডলি ঢলঢলি দলাদলি ধরাধরি। ধন্তাধস্তি বাকবাকি বলাবলি । আঁটা আঁটি আঁচার্তমাচি আড়াআড়ি আধাআধি কাছাকাছি কাটাকাটি ঘাটাঘাটি চটচটি চাপাচাপি চালাচালি চাওয়া-চাওয়ি ছাড়াছড়ি জানাজানি জাপটা-জাপটি টানাটানি ডাকাডাকি ঢাকাঢাকি ফাটাফাটি মাখামাখি মাঝামাঝি মােতামাতি মারামারি বাছাবাছি বাধাৰ্বিাধি বাড়াবাড়ি ভাগাভাগি রাগারগি রাতারাতি লাগালাগি লাঠালাঠি লাথালাথি লাফালাফি সামনা-সামনি হাকাহাকি হাঁটাহাটি হাতাহাতি হানাহানি হারাহারি (হারাহারি ভাগ করা) খ্যাচাখোঁচি খ্যামচা-খেমচি র্য্যাষাৰ্ঘেষি ঠ্যাসাঠেসি ঠ্যালাঠেলি ঠ্যাকাঠেকি ঠ্যাঙঠেঙি দ্যাখাদেখি বঁ্যাকাবেঁকি হ্যাচাকা-হেঁচকি ল্যাপালেপি । কিলোকিলি পিঠোপিঠি (ভাইবোন)। খুনোখুনি গুতোগুতি ঘুষোঘুষি চুলেচুলি ছুটােছুটি ঝুলোকুলি মুখোমুখি সুমুখো-সুমুখি । টেপাটেপি পেটাপিটি লেখালেখি ছেড়াছড়ি । কোনাকুনি কোলাকুলি কোস্তাকুস্তি খোঁচাখুঁচি খোজাখুঁজি খোলাখুলি গোড়াগুড়ি ঘোরাঘুরি শোকাষ্ঠীগুকি দৌড়োদৌড়ি । 昂 এই শ্রেণীর জোড়া কথা তৈরির নিয়মে দেখা যাইতেছে- প্রথমার্ধের শেষে আ ও দ্বিতীয়ার্ধের শেষে ই যোগ করিতে হয় ; যেমন ছড়া ধাতুর উত্তরে একবার আ ও একবার ই যোগ করিয়া ছড়াছড়ি, বল ধাতুর উত্তরে আ এবং ই যোগ করিয়া বলাবলি ইত্যাদি । কেবল ক্রিয়াপদের ধাতু নহে, বিশেষ্য শব্দের উত্তরেও এই নিয়ম খাটে ; যেমন, রাতারাতি হাতাহাতি মাঝামাঝি ইত্যাদি। কিন্তু যেখানে আদ্যক্ষরে ইকার উকার বা ঔকার আছে, সেখানে আ প্রত্যয়কে তাহার বন্ধু ওকারের শরণাপন্ন হইতে হয় ; যেমন কিলোকিলি খুনোখুনি দৌড়োদৌড়ি । ইহাতে প্রমাণ হয়, ইকার ও উকারের পরে আকার অতিষ্ঠ হইয়া উঠে । অন্যত্র তাহার দৃষ্টান্ত আছে ; যথা, যেখানে লিখিত ভাষায় লিখি- মিলাই মিশাই বিলাই, সেখানে কথিত ভাষায় উচ্চারণ করি।- মিলোই মিশেই বিলোই ; ডিবা-কে বলি ডিবে, চিনাবাসন-কে বলি চিনেবাসন ; ডুবাই লুকাই জুড়াই-কে বলি- ডুবােই লুকোই জুড়োই ; কুলা-কে বলি কুলো, ধুলাকে বলি ধুলো ইত্যাদি। অতএব এখানে নিয়মের যে-ব্যতিক্রম দেখা যায় তাহা উচ্চারণবিধিবশত । যেখানে আদ্যক্ষরে অ্যাকার একার বা ওকার আছে, সেখানে আবার আর-একদিকে স্বরব্যত্যয় ঘটে ; নিয়মমত, ঠ্যালাঠ্যালি না হইয়া ঠ্যালাঠেলি, টিপাটেপি না হইয়া টেপা টিপি, এবং কোনাকোনি না হইয়া কোনাকুনি হয় । কিন্তু, শেষাশেষি দ্বেষাদ্বেষি রেষারেষি মেশামেশি প্রভৃতি শ-ওয়ালা কথায় একারের কোনো বৈলক্ষণ্য ঘটে না । বাংলা উচ্চারণবিধির এই সকল রহস্য আলোচনার বিষয় । আমরা শেষোক্ত তালিকাটিকে বাংলার ইঙ্গিত-বাক্যের মধ্যে ভুক্ত করিলাম কেন তাহা বলা আবশ্যক । কানাকানি করিতেছে বা বলাবলি করিতেছে, বলিলে যে-সকল কথা উহ্য থাকে তাহা কেবল কথার ভঙ্গিতে ব্যক্ত হইতেছে। পরস্পর পরস্পরের কানে কথা বলিতেছে, বলিলে প্ৰকৃত ব্যাপারটাকে অর্থবিশিষ্ট কথায় ব্যক্ত করা হয়, কিন্তু কান কথাটাকে দুইবার বঁাকাইয়া বলিয়া একটা ইঙ্গিতে সমস্তটা সংক্ষেপে সারিয়া দেওয়া হইল । এ পর্যন্ত আমরা তিন রকমের ইঙ্গিত-বাক্য পাইলাম। একটা ধ্বনিমূলক যেমন, সো সো কনকন ইত্যাদি । আর-একটা পদবিকারমূলক যেমন, খোলাখালা গোলগাল চুপচাপ ইত্যাদি । আর-একটা